উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ থাকায় গত দুই মাসে সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, তার সিংহভাগই আগের ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৬৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, তিনটি কারণে সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কমেছে। প্রথমত উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ আছে। দ্বিতীয়ত বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ সহায়তা আসছে। এ ছাড়া সামনে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে। এতে সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বেড়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে সরকারের ব্যাংকঋণ এবার বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে চার মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বরাবরই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ এতে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ থেকে বঞ্চিত হয়। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে অনেক ব্যাংক। এতে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মত দেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর শেষে ওই ঋণ স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এর পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে এবার ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি। গত ২৯ আগস্ট শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ফলে চার মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। সবমিলে চলতি অর্থবছরের অক্টোবর শেষে সরকারের ব্যাংক খাতে নিট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। গত জুনে সরকারের নিট ঋণ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় সরকারের নিট ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্যন্ত এর বিপরীতে সরকার ঋণ নেয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকার নিট ঋণ নেয়।