অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফের সাথে হঠাৎ বরিশাল এসেছেন বরিশাল ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেজ ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ।
এসময় মঈন উপদেষ্টা পুত্রকে সাথে নিয়ে বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে ৫ আগস্ট আগুনে পুড়ে যাওয়া নিজ বাড়ি দেখতে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাত্র ৭ দিনের মাথায় মঙ্গলবারের এই সফর নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে বরিশালজুড়ে।
মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে একটি কালো প্রাইভেট কারে করে বরিশালে আসেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক মঈন আব্দুল্লাহ। তার বহরে দুইটি সাদা প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেলও ছিলো।
বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ঠিক ২টা ৩৩ মিনিটে মঈন আব্দুল্লাহ কাউনিয়া ফার্স্ট লেনে নিজ নানা বাড়িতে আসেন। সাথে ছিলেন অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ। নানা বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন তারা। এরপর নানা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করেন মঈন ও মুয়াজ। প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন মঈন আব্দুল্লাহ, তার পাশের আসনে বসা ছিলো মুয়াজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে বলেন, কাউনিয়া থেকে বের হয়ে তারা নগরীর কালিবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনে যান। সেখানে গিয়ে পুড়ে যাওয়া বাড়ি পরিদর্শন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, কালীবাড়ি রোড থেকে মঈন আব্দুল্লাহ নগরীর মুসলিম গোরস্থানে গিয়ে তার মা বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর কবর জিয়ারত করে বরিশাল ত্যাগ করেন।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেজ ছেলে এবং বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আপন ভাই মঈন আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে উপদেষ্টা পুত্রর শেল্টারে ঘোরাটা উদ্বেগজনক। কৃষক লীগ নেতা মঈন ব্যবসায়ীক সেক্টরে নৈরাজ্যের অন্যতম নায়ক। তাছাড়া বিতর্কিত এসব ব্যক্তি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার শেল্টারে চলাফেরা করে সেফ জোনে থাকে, তাদের যদি শাস্তির আওতায় না আনা হয় তাহলে বিষয়টি হতাশাজনক।
সাবেক এক জনপ্রতিনিধি জানান, পুরো বরিশালকে ১৫টি বছর শাসন করে অস্থিতিশীল করেছে পরিবারটি। এই পরিবারের অন্যতম একজন সদস্য এক উপদেষ্টার ছেলের সাথে প্রকাশ্যে ঘোরাটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মঈন আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জন্মস্থান বরিশালে আমি যাব এতে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআই’র পরিচালক এবং সিআইপি। দুপুরের একটু আগে বরিশালে গিয়েছি। মা’র কবর জিয়ারত করেছি। তারপর গেছি কাউনিয়া এলাকার মামা বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছি।’
স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফের ছেলে ব্যারিস্টার মুয়াজ আরিফ সঙ্গে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে তো আমার ছোট বেলার বন্ধু। সেই শিশুকাল থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। বন্ধুত্ব আর রাজনীতি মিলিয়ে ফেলবেন না।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পৈতৃক বাড়িতে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ছাড়া ওই বাড়িতে আমি কি করে যাই? তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আমার বাড়ির যেসব ছবি দেখেছি, তাতে সেখানে গেলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারব না। ওই বাড়ির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের গড়া ওই বাড়িতে কোনোদিন একটা ঢিল-ও পড়েনি। যতদূর জানি, আমার পরিবারের কেউ-ও কখনো এভাবে কারও বাড়ি পোড়ায়নি। আমি বাবা’র সন্তান হিসাবে গর্ববোধ করি। ওই বাড়িতে যখন যাব তখন বাবা’র সঙ্গেই যাব।’
হাসানাত পুত্র মঈন আব্দুল্লাহ’র এই সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘নিজের শহরে তিনি (মঈন) আসতেই পারেন। তবে সময় নির্বাচনটা তার সঠিক হয়নি। এখন যদি ছাত্র-জনতা তার ওপর হামলা চালাতো বা গাড়ি ভাঙচুর করত, সেই দায় তিনি কাকে দিতেন? আমাদের সবচেয়ে বড় যেটা আপত্তি তা হলো মঈন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টার সন্তানের উপস্থিতি। বাল্যবন্ধু হোক আর যাই হোক, তিনি একজন উপদেষ্টার সন্তান। এদেশের মানুষের চরম ঘৃণার কবলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সেই হাসিনা’র ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ।
ইতিমধ্যে একজন উপদেষ্টার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আরেক উপদেষ্টার ছেলেকে নিয়ে মঈন আব্দুল্লাহ’র এই সফর ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়। এসব বিষয়ে বর্তমান সরকারের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।