বুধবার, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরনে গৌরনদীতে স্মরন সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ চিন্ময়কে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের বিবৃতি

উত্তপ্ত রাজনীতি: রাজপথ ছাড়বে না বিএনপি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৮৮ বার পঠিত

‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।’ বিএনপির সাম্প্রতিক সব কর্মসূচিতে এই স্লোগানটি বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। দলটির অভ্যন্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায় দুই মাস ধরে টানা কর্মসূচিতে থাকা বিএনপি ক্ষমতাসীনদের হামলা-মামলা উপেক্ষা করেই রাজপথে টিকে থাকতে চায়। বর্তমানে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জোনে দলটির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি চলছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। এরপর আবারো নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। তবে এক্ষেত্রে দলটি কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে ‘সতর্ক’ পদক্ষেপেই সামনে এগোতে চায়।

জানা গেছে, আগামীকাল দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সরকারি দলের হামলার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে সরকারি দল যাতে বিএনপিকে মামলা-হামলা দিয়ে কোণঠাসা করতে না পারে, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বৃহৎ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপি কয়েক মাস ধরেই সিরিজ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেখানে পুলিশের গুলিতে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুইজন নেতা নিহত হন। বিএনপির নেতারা মনে করেন, ভোলায় দুই নেতার ওই হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিকে সরকার আন্দোলন থেকে দূরে থাকার সঙ্কেত দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ভোলার ঘটনার পর গত ২২ আগস্ট থেকে বিএনপি তাদের কর্মসূচি গ্রামপর্যায়ে নিয়ে যায়। ইউনিয়ন-পৌরসভা-উপজেলায় তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তারা সারা দেশে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তৃণমূলে বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে জেলায় জেলায় হামলা হয়েছে। যেখানে বিএনপি, সেখানেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তা সহিংসভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

দেখা গেছে, গত ২৫ দিনে অর্ধশতাধিক জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে। নরসিংদীর মনোহরদীতে কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার পাশাপাশি পুলিশও গুলি চালিয়েছে। এতে ২৭ নেতাকর্মী রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন। যশোরে বিএনপির মরহুম নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তরিকুলের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামের গাড়িতেও হামলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয়। ভোলা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে কক্সবাজারের পেকুয়া, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। মাগুরায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় মামলা হয়েছে। বোমা হামলা, ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে এই মামলায় বিএনপির ৩৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৯৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরো ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ফেনীতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িতে হামলা হয়েছে। বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির র্যালিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে সেখানে শাওন নামে যুবদলের একজন কর্মী নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরো অনেক নেতাকর্মী। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত শনিবার বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে বিনা উসকানিতে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওই হামলায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল আহত আহত হন। এদের মধ্যে হামলায় তাবিথ আউয়ালের মাথা ফেটে যায়। একই দিন কুমিল্লায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু যুবলীগের হামলায় মারাত্মকভাবে জখম হন। তাকে সেখান থেকে এনে রাজধানীর এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। শনিবারের এই হামলার দুই দিন আগে মিরপুরে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

বিএনপির তথ্যানুযায়ী, গত ২২ আগস্ট থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩২৯ জনের অধিক। আসামি করা হয়েছে ২০ হাজারের অধিক। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৭১১ জন। আর ৩১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে তিনজন।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনাগুলোর পিছনে সরকারি দলের ‘মোটিভ’ চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে বিএনপি। নেতারা মনে করছেন, দেশজুড়ে বিএনপির কর্মসূচিতে যেভাবে জন¯্রােত নেমেছে, তাতে সরকারি দল ভীত হয়ে পড়েছে। যে কারণে মুখে তারা বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হবে না বললেও, মূলত বিরোধী দলকে তারা কোনো স্পেস দিতে রাজি নয়। একইসাথে ক্ষমতাসীন দল আগের মতোই মামলা-হামলা চালিয়ে বিএনপিকে দমন করার কৌশল নিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে-উদ্দেশ্যমূলকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য, বানচাল করার জন্য, সারা দেশে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে। সমগ্র দেশে তারা একটি ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন চলবে। কোনো শক্তি এই আন্দোলন থামাতে পারবে না।

এ দিকে বিএনপি সাম্প্রতিক এসব হামলার চিত্র কূটনৈতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ৪-৫টি দেশের কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছে দলটি। এসব বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের সাম্প্রতিক হামলা ও এ পর্যন্ত তিনজন নেতাকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানানো হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট ডিকসনের সাথে বৈঠকের পর দূতাবাস আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়।
জানা গেছে, একটি ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে ২০২৩ সালে আন্দোলনকে তুঙ্গে নেয়ার টার্গেট করেছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে সাংগঠনিক সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে তারা। সারা দেশে দলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতেই সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলো চলছে। জানা গেছে, ঢাকায় মহাসমাবেশ করে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে দলটি। তবে এর আগে প্রতিটি বিভাগে সমাবেশ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক গতি ফিরিয়ে আনা হবে। তবে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়িয়ে প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় দলটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com