শুক্রবার, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী র‌্যালি ও আলোচনা সভা সারাদেশে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, মানববন্ধন হাসিনার দালালরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে : সারজিস শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র বিএনপি মেনে নেবে না : জয়নুল আবদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে-তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎহীন সচিবালয়, বন্ধ দাপ্তরিক কার্যক্রম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের নিহত ৪ পেঁয়াজের দাম কমছেই, খুশি ভোক্তারা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য মিল-কারখানা, বেকারের আর্তনাদ

উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের মানসিকতার পরিবর্তন

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ৯৫ বার পঠিত

আগামীর সমাজব্যবস্থা কোন দিকে যাবে তা অনেকটাই নির্ভর করে আজকের তরুণ প্রজন্মের ওপর। আর তরুণ প্রজন্ম কিভাবে বেড়ে উঠবে তা নির্ভর করে সমাজের নীতিনির্ধারকদের ওপর। একটি সমাজ তখনই উন্নত সমাজে পরিণত হয় যখন সেই সমাজের মানুষগুলো উত্তম গুণে গুণান্বিত হয়। আজকাল মানুষকে মূল্যায়নের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি। যার যত টাকা আছে সে-ই সমাজে তত বেশি প্রভাবশালী। টাকার প্রভাবে সে নেতৃত্বকেও নিজের করে নিচ্ছে। মানুষ তার বশে চলে আসছে।

যার তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে না। ন্যায়বিচার হয়ে পড়েছে সঙ্কুচিত। গুণী ব্যক্তির সমাজে কদর নেই। কারণ তার হাতে ক্ষমতা নেই। অর্থ নেই। মানুষকে তার দ্বারস্থ হতে হয় না। সময় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নৈতিক দিক থেকে আমরা কতখানি দুর্বল হয়ে পড়ছি। তাই বেশির ভাগ জায়গায় নেতৃত্বের আসনে আজ এমন সব মানুষ বসেছে তারা এই পদের যোগ্য কি না, যা তাদের কর্মকাণ্ড ও আচরণে সন্দেহ হয়। এমন একটি সময়ের সতর্কবাণী দিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’

যখন কোনো সমাজের মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের মানসিকতা তৈরি হয় তখন সে সমাজকে বদলাতে খুব বেশি সময় লাগে না। এ সময় নেতৃত্বের হালটা এমন কাউকে ধরতে হয়, যে শক্ত হাতে এটিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। সংখ্যা গরিষ্ঠ জনসাধারণের মধ্যে সে এমন জাগরণ তৈরি করবে, যাতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা এর সামনে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারবে না। এই পরিবর্তনের ডাক যখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসে তখন সেটি সহজে বাস্তবায়নযোগ্য হয়। এমন একটি মিশনকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন কিছু সঙ্ঘবদ্ধ সাহসী সৈনিক যারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু অবদান রেখে যেতে চায়। একটি দেশের উন্নয়নে সেই দেশের জনগণের ভূমিকা যতটা না থাকে তার চেয়ে দ্বিগুণ অবদান রাখে দেশটির সরকার। একজন যোগ্য শাসকই পারে একটি জাতির ইতিহাস আমূল বদলে দিতে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এককালের দরিদ্র মালয়েশিয়াকে ডা: মাহাথির মুহাম্মদ বিশ্বের ১৪তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে শুধু আশার আলো দেখাননি, বরং আত্মনির্ভরশীল জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন। তিনি জাতীয় স্বার্থে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংহতি ও সম্প্রীতি যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তা সবার জন্য শিক্ষণীয়।

ইদানীং উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশ কিছু নেগেটিভ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বড়দের প্রতি সমীহ, ছোটদের স্নেহ, মা-বাবার আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা, নিকটজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আজকাল অনেকেই করছে না। অবশ্য এ জন্য এককভাবে সময়কে দায়ী করা যায় না। এই মন্দ পরিবর্তনের জন্য অভিভাবকরাও কম দায়ী নন। হঠাৎ করে একটি শিশু ভালো থেকে মন্দ হয়ে যায়। সাথী বা পারিপার্শিকতার প্রভাবে ধীরে ধীরে সে আঁধারে হারিয়ে যেতে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে যদি অভিভাবক একটি শিশুকে এভাবে দায়িত্বহীনভাবে ছাড়ে, তার উচ্ছন্নে যাওয়ার জন্য সে-ই বেশি দায়ী।

একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি শিশুদের কতটা যত্ন নিয়েছেন? প্রশ্ন করুন নিজেকে। তাদের আদর করুন। স্নেহ-ভালোবাসা দিন। ভুল করলে বুঝিয়ে বলুন। প্রয়োজনে ওর খেলার সাথী হোন। সময় পেলে ওর পড়াশোনার সময় আপনিও ওর পাশে বসুন। ওর সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করুন। দেখবেন, নিজের সম্পর্কে সবই সে আপনাকে জানাবে। তার সমস্যাগুলোও আপনাকে খুলে বলবে। কিন্তু আমরা শিশুদের সাথে এই সুন্দর আচরণগুলো করি না। বরং তাকে সবসময় ভীতির মধ্যে রাখি। এক সময় সে আমাদের বলয় থেকে বেরিয়ে যায়। যাদের দ্বারা সে প্রভাবিত তাদেরই অনুসরণ করে।

একটি শিশুকে একজন ভালোমানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মা-বাবাকেই বেশি দায়িত্বশীল হতে হয়। তার মধ্যে কিছু আচরণিক পরিবর্তন আনতে হয়। প্রকৃত শিক্ষা বলতে যা বোঝায় সেটি তো শুধু স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একটি শিশুর চারিত্রিক ও আত্মিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও শিক্ষার সাথে জড়িত। আর জীবনধর্মী এই শিক্ষাটির শুরু হয় জন্মের পর থেকেই যা শিশুরা পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে।

বর্তমানে দেখা যায়, যে বয়সে একজন ছেলেমেয়ের কুরুচিপূর্ণ বিষয়গুলো ভাবার কথা নয়, সে দিকেই তারা বেশি ঝুঁকছে। বয়ঃসন্ধিকালে কেউ ধূমপানে আগ্রহী হয়। কেউ আবার মাদকের মতো নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কেউ কেউ জড়িয়ে যায় অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে। তাই এ সময়ে সন্তানের আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে ‘বয়সের দোষ’ না ভেবে বিষয়টিকে সিরিয়াস হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। এ সময় তাদের প্রতি যত্নবান হোন। তাদের সামনে হিংস্র আচরণ পরিত্যাগ করুন। কারণ তারা অনুকরণপ্রিয়। এগুলো তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাদের অত্যধিক ডিপ্রেশনে রাখবেন না। তাহলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যখন শিশুরা এ ধরনের চাপ সইতে না পারে বা মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ পায়, তখন স্বেচ্ছাচারিতা তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। এখান থেকে তারা মাদকসহ বিভিন্ন প্রকারের নেশার সাথে জড়িয়ে যেতে পারে।

আজকাল শিশু-কিশোররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। মূল্যবান সময়ের একটি বড় অংশ এখানে ব্যয় করছে। ফলে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। সাইবার ক্রাইমের মতো বড় অপরাধগুলো এভাবেই বিস্তার করছে। তাদের মাধ্যমে এমন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কিশোর গ্যাংয়ের আড়ালে তারা সংঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। যখন তারা অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে, সহজে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তাই সাইবার অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে প্রথমেই পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুরা ইন্টারনেটে বসে কোন সাইটে যাচ্ছে, কী করছে, সে বিষয়ে পরিবারকে নজরদারি করতে হবে। ছেলেমেয়েকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসার সুযোগ দিতে হবে ঠিকই, তবে তাকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না।
এ কারণে শিশুদের হাতে ব্যক্তিগত আইফোন, স্মার্টফোন বা এ জাতীয় ডিভাইস না দেয়াই ভালো।

আজকাল এমন অভিযোগও শোনা যায়, অনেক ছেলেমেয়ে মা-বাবার কথা শোনে না। তারা এমন সব বায়না করছে, যা পূরণে মা-বাবা অনাগ্রহ দেখালে তারা সুইসাইডের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা শিশুদের আদরের নামে অনেকসময় তাদের ক্ষতি করে থাকি। সে আমার কাছে কিছু দাবি করলে সে বিষয়ে তার প্রয়োজনীয়তাও জানা দরকার। যদি তার চাওয়া ও আমার দেয়ার মধ্যে সমন্বয় থাকে, তাহলে শিশুরা কখনো এতটা বিলাসী হয়ে ওঠে না।

রাস্তা-ঘাটে দেখা যায়, ছোট ছোট স্কুলপড়–য়া ছেলেমেয়ে পড়াশোনার নাম করে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাত হয়ে গেছে তবুও বাসায় ফেরার নাম নেই। ছেলেবন্ধু বা মেয়েবন্ধুকে নিয়ে টাইম পাস করছে। সে কখন বাসা থেকে বেরুল, কখন ফিরল এসব বিষয়ে অভিভাবকদের অবশ্যই খেয়াল রাখা প্রয়োজন। হতে পারে আপনার এই অসাবধানতা তাকে অনেক বড় ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যখন আপনি বুঝতে পেরেছেন তখন ক্ষতির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এ কারণে ছেলেমেয়েকে বোঝানো দরকার, তোমাকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করতে হবে। আজকে আমি যেমন দায়িত্বশীল হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছি, একদিন তোমাকেও তা করতে হবে। ছেলেমেয়েকে আয়ত্তের মধ্যে রাখা মানে, সন্দেহপ্রবণতা নয়, তার ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করা নয়, বরং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; তাকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com