বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটির ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। কখনো কখনো পলেস্তারা পড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহতও হচ্ছেন। ওই ভবনের পিলার, বিম ও ছাদে ফাটল ধরেছে। এই জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রোগী ও তাঁদের স্বজনেরাও আতঙ্কে থাকেন। এ ছাড়া চিকিৎসক–সংকটের কারণে এখানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে একটি ভবন নির্মাণ করে উজিরপুর সদরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে ২০১০ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দুটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একটি ৩১ শয্যার ও অন্যটি ২০ শয্যার। ৩১ শয্যার ভবনটিতে নারী ও শিশু ওয়ার্ড এবং ২০ শয্যার ভবনটিতে পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০০–৪০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। আর অন্তর্বিভাগে সব সময় ৬০–৭০ জনের বেশি রোগী থাকেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য এখানে চিকিৎসকের পদ আছে ২১টি। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ছয়টিসহ চিকিৎসকের নয়টি পদই শূন্য। বাকি ১২ জনের মধ্যে ৪ জন প্রেষণে অন্য হাসপাতালে কাজ করছেন। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ আটজন কর্মরত আছেন। টেকনিশিয়ান না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রটি পাঁচ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী–সংকটের কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের পিলারগুলোয় ফাটল ধরেছে। অধিকাংশ পিলারের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। ছাদের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। কোথাও কোথাও ছাদে ফাটল দেখা গেছে। পলেস্তারা খসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় ওয়ার্ডগুলোর বৈদ্যুতিক পাখা খুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রচণ্ড গরমে রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ৩১ শয্যার পুরোনো ভবনটি নারী রোগীদের জন্য নির্ধারিত। ভবনটি খুবই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। রোগী ও চিকিৎসকের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব নেই। শয্যাসংকটে কয়েকজন রোগী মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২০ শয্যার ভবনটির অবস্থাও খুব খারাপ।
ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আতঙ্কে থাকেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে এখানে ভর্তি হওয়া রোগী সাহানার আক্তার বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে আতঙ্কে থাকতে হয়। ছাদের পলেস্তারা খসে বিছানায় পড়ে, খাবারে পড়ে। আবার শরীরে পড়েও রোগী জখম হয়।
চিকিৎসক–সংকটে যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়, তা এখানে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন এই প্রতিনিধি। এই বিষয়ে মঙ্গলবার বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী মোতালেব হোসেন, আলিমন বিবিসহ কয়েকজন বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার এতই কম যে বেইন্নাকালে (সকালবেলা) হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইতে আইলে সন্ধ্যাকালে বাড়ি ফিরতে হয়। হেই গ্রাম থেকে আইয়া মোরা অনেক সময় ডাক্তার না দেহাইয়া বাড়ি ফিররা যাই।’
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাখাল বিশ্বাস বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন ছাড়াও চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলোও জরাজীর্ণ। এগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে হাসপাতাল ভবনের। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পরও কোনো জায়গা না থাকায় পরিত্যক্ত ভবনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে ও নিতে হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম (৪০) ও স্বাস্থ্য সহকারী মো. হান্নান (৪৫) নিজেদের কক্ষে বসেই কাজ করার সময় ছাদের পলেস্তারা পড়ে আহত হন। ভবনটি সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সুত্রঃ প্রথম আলো