শুক্রবার, ১১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ঈদ এলেই প্রবাসীর মন ভারি হয়ে ওঠে

সময়ের কন্ঠধ্বনি ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩
  • ৭৫ বার পঠিত

ঈদ এলেই প্রবাসীদের মন ভারি হয়ে ওঠে। চলার পথে রাজধানী ঢাকা শহরের মতো প্রবাসে কোনো যানজট না থাকলেও এখান থেকে ইচ্ছে করলেই বাস আর ট্রেনের টিকিট কেটে দেশের বাড়িতে যাওয়া যায় না। দেখা হয় না মমতাময়ী মা-বাবা পরিবার পরিজনদের সঙ্গে। না দেখার, না পাওয়ার স্বজন হারানোর অব্যক্ত ব্যথা আর বিষাদ বুকে চেপেই কাটাতে হয় প্রবাসীদের ঈদ।

পাহাড়ের পাদদেশ, বৃক্ষের ছায়ারাজি, ঝর্ণাধারা আর বরফাচ্ছন্ন কানাডার প্রবাস জীবনে বড় অগোছালো সময়ের সিঁড়িতে বসে অশ্রুসিক্ত নয়নে আজ কত কথাই না মনে পড়ে। অতীত ভুলে থাকা যেমন সহজ নয়, তেমনি বয়সের সাথে সাথে সবকিছু কেন জানি ম্লান হয়ে যায়।

মা- বাবার অকৃতিম ভালোবাসা- আজ কেবলই স্মৃতি। এই তো সেদিন প্রতিটা ঈদে তাদের বাড়ি আসা নিয়ে অস্থিরতা আর উদ্বিগ্নতা এখন ম্লান। কত কথাই না সেদিন হতো। বাড়িতে আসার খবরে তাদের আনন্দ রশ্মির অশ্রুসিক্ত নয়নের ভালো লাগা আর ভালোবাসা আজ স্মৃতির পাতায় পর্যবসিত। ওপারে ভালো থাকুন আপনারা, আমি না হয় কৃত্রিম স্বার্থের ভালোবাসা নিয়েই থাকি। আপনাদের অনুপস্থিতির স্থায়ী ঠিকানা এখন কেবলই পেছন ফিরে চায়। আপনাদের দোয়া-ই আমার পাথেয় হয়ে রইল।
আমার সোনালী অতীত, ইচ্ছের পালকগুলোকে নীল আকাশে দুর্নিবার উড়িয়ে দেয় কৈশোরে ফিরে যাওয়ার ডাক। নদী বিধৌত পদ্মার ভরা যৌবন আর তারুণ্যের জয়গানের রং মাতানো সোনালী অতীত ধরে অনেক সময় নিজেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। মনের ভুলেও নদীর কলতান, জেগে থাকা চর, দুষ্টু ছেলেদের বৃষ্টির নিচে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠা আর ঝরের দিনে আম কুড়ানোর সেই স্মৃতি সুদূর প্রবাসে থেকেও পারিনি ভুলতে।

মনে পড়ে সেই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ঘুমের কাঁতারে সারারাত জেগে থাকা। রাস্তার পাগলির সকালে টংয়ের দোকানে চায়ের কাপে পাউরুটি ভিজিয়ে খাওয়া, রাতের কথা ভেবে পাগলিটির হাতের সঙ্গে শীতে সারা শরীর কেঁপে উঠার কথা। ক্লান্ত শরীরে তার চেহারায় স্পষ্ট নির্ঘুম রাতের ক্লান্তিহীন সংগ্রামের কথা–সবই আজ মনে পড়ে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনেও যেন রূপ বদলায়। চিন্তা-চেতনায় আসতে থাকে পরিবর্তন। দিন যায়, থাকে কথা, থাকে না সময়, মাস আর বছর। মায়ের বুকে মাথা রাখা সেই ছোট্ট শিশুটিও একদিন বড় হয়।

মাগো তোমার বড় হওয়া সেই ছোট্ট শিশুটি একদিন কাঁচের ভাঙা আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠে। চেনা-অচেনার হাত ধরে উল্টো পথে হাঁটতে থাকে। যদি কখনও দেখা মেলে নিজের অস্তিত্বের আঁকড়ে ধরা খড়কুটোর।

হায়রে মানুষ! রঙিন চশমার দিন শেষ হতে না হতেই আসে নতুন দিন। চিন্তা-চেতনায় আসে পরিবর্তন। অস্তিত্বের রহস্যময়তা ও কালস্রোতে কুটের মতো ভেসে যাওয়া বেদনাহত জীবন খুঁজতে থাকে ভেতরের মানুষটাকে। খুঁজতে থাকে খেলার পেছনের খেলাকে। সময়ের সিঁড়িতে জীবনকে তো আর আটকানো যায় না। জীবনটা হয় ইতিহাস। জীবন সায়াহ্নে এসে চেতনারও যে পরিবর্তন হয়, তা তার কোনো কাজেই আসে না। নিজের চেনা মুখ হয়ে যায় অচেনা।

জীবনের স্বাদ নিতে আসা সেই মুখোশকে কখনই ভেতর থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তারপরও মানুষ থেমে থাকে না। মানুষ থেকে জন্ম নেয় আরেকটি মানুষ। হিংসা বিদ্বেষ, লোভ লালসার উন্মমত্ততায় হারিয়ে ফেলে নিজেকে।

সুদূর প্রবাসে বসে সারাক্ষণ কেবল মনে হয় গ্রামের রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ, গুরুজন, আর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের।নৈতিক শিক্ষা আর আত্মিক পরিশুদ্ধতায় কত পরিবর্তন। নতুন প্রজন্মের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা আর কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হবার সে কি চেষ্টা! ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য, আর ম্লান হয়ে যাওয়া বাংলার সংস্কৃতি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ক্ষুদে বার্তাগুলো প্রবাস জীবনে দেশের মায়া বয়ে বেড়ায়। কল্পনায় মন চলে যায় গ্রামের বাড়ির আঙিনায়। গ্রামের মাটির বাড়ির বাইরে রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায় বাঁশের চাঙে শুয়ে অলস দুপুর পার করা। যেখানে নেই কোনো তাড়াহুড়ো। জীবন চলেছে দুপুরের অলস বাতাসের গতিতে এলোমেলোভাবে। আর মানুষের চিরাচরিত স্বভাব মনের অজান্তেই আবারও কৈশোরে ফিরে যাওয়া।

আহসান রাজীব বুলবুল , কানাডা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com