শুক্রবার, ০৬:২৪ অপরাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী র‌্যালি ও আলোচনা সভা সারাদেশে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, মানববন্ধন হাসিনার দালালরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে : সারজিস শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র বিএনপি মেনে নেবে না : জয়নুল আবদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে-তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎহীন সচিবালয়, বন্ধ দাপ্তরিক কার্যক্রম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের নিহত ৪ পেঁয়াজের দাম কমছেই, খুশি ভোক্তারা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য মিল-কারখানা, বেকারের আর্তনাদ

ইবির সেই হলে নেত্রী অন্তরাই শেষ কথা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৭৬ বার পঠিত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, সানজিদা চৌধুরী অন্তরাই হলের ‘নীতি নির্ধারক’। অন্তরা মানেই এক মূর্তিমান আতঙ্ক। হলে একক আধিপত্য বিস্তার করে জুনিয়রদের ওপর ভয়ানক নির্যাতন চালান তিনি। তার কথার বাইরে গেলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। শিক্ষার্থীরা ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অন্তরা এই হলের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

ঘটনার সময় পাশের গণরুমে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্তরার নির্দেশে ফুলপরীকে গণরুম দোয়েল ১-এ নিয়ে আসা হয়। সেখানে আসামাত্রই চারদিক থেকে মারধর শুরু হয়। কেউ বলে, ‘ওর মুখে মার, ওর চেহারা

ইয়ে করে দে’। নির্যাতনকারীরা বলছিল, তুই এত সাহস কী করে পাছ। আমাদের নামে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ দিছিস। র‌্যাগিং কী এখন দেখাচ্ছি তোকে, এখন সত্যি র‌্যাগিং তোকে দেখাব।’ উর্মী মীমকে বলে- ওর মুখে মারিস না, দাগ লেগে যাবে। শরীরে মার। কেউ কেউ বলছিল- মারিস না, বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে। একপর্যায়ে তারা ফুলপরীকে চাপ দিয়ে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে গালি দিতে বলে এবং ভিডিও করে। এভাবে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলতে থাকে নির্যাতন। পরে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকায় তিনি চেঁচিয়ে উঠলে নির্যাতনকারীরা ভুক্তভোগীকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে দিয়ে গ্লাস চেটে পরিষ্কার করানো হয়। তবে এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসায় ফুলপরীর বিচার দাবিতে আন্দোলন করে অন্তরা ও তার অনুসারীরা। এমনকি পাল্টা লিখিত অভিযোগ দেয় প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টা ও হল প্রভোস্ট বরাবর।
ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িত আরও চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাওয়াবিয়া। চারজনই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সম্প্রতি বন্ধন ৩২-এর কনসার্ট প্রোগ্রামে সবাইকে বাধ্যতামূলক টি-শার্ট কিনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৪০০ টাকা দিয়ে টি-শার্ট নিতে অনেকেই আপত্তি জানায়। আপু (অন্তরা) ক্ষেপে গিয়ে বলেন, নিতেই হবে। না হলে রুম থেকে বের করে দেওয়া হবে। তার ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারি না। হলে সিট হারানোর ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকি। এ ছাড়া হলের সিনিয়র এক শিক্ষার্থীকে জোর করে সিট থেকে নামিয়ে দিয়ে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন অন্তরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিভি না পাঠিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে সহসভাপতির পদ পান অন্তরা। কিন্তু এর আগে ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী হওয়ায় সহজেই এ পদ পান তিনি। পদ পেয়েই ১৫-২০ জন অনুসারী নিয়ে গণরুমসহ শেখ হাসিনা হলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় দ্রুতই হলজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। এমনকি ফুলপরীকে নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে মধ্যরাতে প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের গণরুমে থাকা ছাত্রীদের জোরপূর্বক আন্দোলনে নামানোর অভিযোগ রয়েছে অন্তরার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তিনি নিজ বিভাগের পরীক্ষায় বিভিন্ন অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের দায়ে শাস্তি পেয়েছিলেন।

এদিকে ঘটনার তদন্তের সহায়ক হিসেবে থাকা ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ গায়েব হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেদিন রাতে কী ঘটেছিল, সেটার তথ্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সে ফুটেজ মিলছে না। তদন্ত কমিটি ফুটেজ দেখতে গিয়ে সেখানে ১৯৭০ সালের ফুটেজ দেখতে পায়। সিসি ক্যামেরার বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফুটেজে এত পুরনো তারিখ দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আহসানুল আম্বিয়া। তিনি বলেন, ওই ব্যাটারির মাধ্যমে সিসি ফুটেজে তারিখ ও সময় দেখা যায়। সেটি নষ্ট থাকায় ইনিশিয়াল ডেটে চলে গেছে। ফুটেজ হার্ডডিস্কে থাকার কথা। সেখান থেকে রিকভারি করার চেষ্টা চলছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, ‘হলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্তরার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে শিক্ষার্থীদের জানাতে আহ্বান জানিয়েছি। এতদিন কেউ কিছু বলেনি। তাই এ অবস্থা। আশা করি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

ফুটেজ গায়েবের বিষয়ে প্রভোস্ট বলেন, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হার্ডডিস্কে সমস্যা হওয়ায় ফুটেজ শো করছে না। দুই-একদিনের মধ্যে সব পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com