ইউরিয়া সার উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতিসহ নানা কারণে ১১ খাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে অনুমোদিত মেয়াদ। এ সময়ে প্রকৃত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প ব্যয় মোট ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। শুধু তাই নয়, সময়ও বাড়ছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে প্রকল্প থেকে সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ২ বছর।
‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ শীর্ষক প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে উঠে এসেছে এসব তথ্য। এটি বাস্তবায়ন করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির যেসব খাতে ব্যয় বাড়ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-রেললাইন স্থাপনে ২৬১ কোটি টাকা, গ্যাসলাইন স্থাপনে ৭০ কোটি টাকা এবং আয়কর (জেনারেল কন্ট্রাকটরদের) ১ হাজার ৯১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া আমদানি ভ্যাট হিসাবে ৮৮ কোটি ৬৬ লাখ, গ্যাস বিল ১৬২ কোটি ৪৪ লাখ, মেশিনারি তেল ১৯ কোটি এবং কেমিক্যাল খাতে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বেড়েছে। আরও বেড়েছে অনাবাসিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। কারখানার জন্য ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির জন্য ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রাস্তা তৈরিতে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং অফিস সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়বে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. নূরুল আলম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন ও জাপানের নামকরা কোম্পানি কাজ করছে। বিডার্স ফাইন্যান্স হিসাবে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন,
ব্যাংক অব টোকিও মিটসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড এবং এইচএসবিসি হংকং অর্থায়ন করছে। টাইম লাইন অনুযায়ী বাস্তবায়নের কাজ চলছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়। সেই সঙ্গে রেললাইনসহ নতুন কিছু আইটেম যোগ করতে হয়েছে। সবকিছু মিলে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। তবে আশা করছি বর্ধিত মেয়াদের আগেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং বিডার্স ফাইন্যান্সিং হিসাবে ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীতে এসে ব্যয় বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদনের সময় প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় বিদ্যমান ঘোড়াশাল ইউরিয়রা ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ জানিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত কারণে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তির ইফেক্টটিভ কন্টাক্ট বিলম্বে কার্যকর হয়েছে। এছাড়া সিডি ভ্যাট, রেললাইন স্থাপন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, লোন ব্যবস্থাপনা ফি, ইন্স্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি, কেমিক্যাল পণ্য, মেশিনারিজের জন্য লুব্রিকেন্ট ও ট্রায়াল রানের জন্য গ্যাস ক্রয় এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নতুন অঙ্গ হিসাবে জেনারেল কন্ট্রাকটারদের আয়কর (চুক্তি অনুসারে), সরকারি বিভিন্ন লাইসেন্স ফি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অডিট ফি ও অনুষ্ঠান খাত সংযোজন, অর্থ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ইকোনমিক কোড বা সাব কোড হালনাগাদকরণ এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কারখানা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে দেরি হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু খাতে ব্যয় কমেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সিভিল কাজের ট্যাক্স কমেছে ৫০ কোটি টাকা। আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন সংস্কার খাতে কমেছে ৬৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং দেশি ও বিদেশি পরামর্শক খাতে কমেছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ইমরান উদ্দিন মিয়া বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন (বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার) ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কারখানা স্থাপন হবে। এটি আধুনিক নতুন, জ্বালানিসাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব কারখানা হবে।
ফলে কৃষি উৎপাদন তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে সুলভ মূল্যে কৃষকদের সার সরবরাহ ও ইউরিয়া আমদানি ব্যয় কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।