চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিএনপির সমাবেশে ‘বিপুলসংখ্যক’ মানুষের জমায়েতের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপির লোকসমাগম নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। সেই গণমানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে এবং থাকবে।
তবে বিভাগীয় শহরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নজরদারি বাড়াতে মৌখিক নির্দেশনা এবং ডিসেম্বরে বিভাগীয় সমাবেশ করার পরিকল্পনা, রাজপথ দখলে নিতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন তৎপরতা বলছে, বিএনপির সমাবেশগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। বিশেষ করে ডিসেম্বরে বড় আন্দোলনে নেমে আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করার যে হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছে বিএনপি, তা পুরোপুরি আমলে না নিলেও মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুই সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বীর বিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপিকে আর মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। বিএনপির ডিসেম্বরের কর্মসূচি আলোর মুখ দেখবে না বলেও তারা হুশিয়ারি দেন।
বিএনপির সমাবেশগুলো নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যুদ্ধ করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে পরাস্ত করেছে। আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আওয়ামী লীগ আবার খালেদা জিয়াকে ’৯৬ সালে ৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগ কোনো আন্দোলন, সংগ্রাম ও সমাবেশ দেখে ভয় পাওয়ার দল নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে গণমানুষের মুক্তির আন্দোলন করার জন্য। ফলে কোন দলের কী কর্মসূচি আছে- এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয় বা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে গণশক্তি।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরের পর বিএনপি নেতৃবৃন্দ রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করবে- এমন খবর পাওয়ার আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দকে অবস্থান নিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে বিকালের দিকে নিজেদের আওতাধীন এলাকায় ঝাড়– মিছিল করে। এর আগেও রাজধানীর মিরপুর, বনানীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিএনপি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সমাবেশ করতে যায়। এমন খবরে পাশেই সমাবেশের প্রস্তুতি নেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে সংঘর্ষও বাধে। এর প্রতিবাদে মিরপুর এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত) সাবিনা আক্তার তুহিনকে তার নেতৃবৃন্দ নিয়ে লাগাতার কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়। প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা যায় মহানগর আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেও।
গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার প্রবেশদ্বার ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তাদের সমাবেশ মানেই ধরে নিতে হবে, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটাতেই তারা তৎপর। সেই ভাবনা থেকে ঢাকা-১৮ আসনের প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ সজাগ দৃষ্টিতে ছিল। এখানে বিএনপি যাতে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।’
ঢাকার আরেক প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশ মোকাবিলায় নিয়মিত মাঠে আছেন স্থানীয় নেতারা। জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষের অবস্থান যাত্রাবাড়ী এলাকায়। একই সঙ্গে ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার। ফলে আমরা সবসময় অ্যালার্ট থাকি, আজেও (গতকাল রবিবার) ছিলাম। তবে এদিকে আজ বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না।’
তবে আওয়ামী লীগ সরাসরি বিএনপির পাল্টা কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউন ও লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিয়ে দলটি এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। আগামী ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ওইদিন সারাদেশে ‘অভূতপূর্ব’ সমাবেশ ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। বিএনপির সমাবেশের বিপরীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে যুবলীগ। এ বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘১১ নভেম্বর আপনাদের কাছে আমার প্রত্যাশা যে আপনারা এই মহাসমাবেশকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আপনাদের সর্বসাধ্য দিয়ে সফল করবেন।’
এদিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও খুলনাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এই সম্মেলন সফলভাবে শেষ করে বিভাগীয় শহরের জনসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। জানুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকে এই জনসভা শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।