টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ছক্কা তো দূর, কোনো রানই ছিল না তার। একবার নেমেছিলেন ব্যাট হাতে, গোল্ডেন ডাক সঙ্গী সেবার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও কোনো ছক্কা ছিল না। পিএসএলেও মেরেছেন মোটে একটি ছক্কা। ফলে আর কী আশা করতে পারেন তার থেকে? তার ওপর ১১৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, ১১ রান প্রয়োজন শেষ ওভারে, আবার শেষ উইকেট হিসেবে তিনিই মাঠে।
এদিকে মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে উত্তেজনার উত্তালতা ছড়িয়েছে। ফলে শেষ ওভারে ১১-এর মূল্য যেন তখন অঙ্ক ছাপিয়ে আবেগে বাসা বেঁধেছে। ফলে দুই দলেরই বুকে কম্পন উঠেছে, নিজের অজান্তেই ঠোঁট থরথর করছে, হয়তো সৃষ্টিকর্তার নাম ঝপছে। এমন পরিস্থিতি ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ আর কিইবা করতে পারে? কিন্তু তিনি যা করলেন তা এক কথায় দমবন্ধ মুগ্ধতা।
অনিন্দ্য, অনবদ্য, অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, অবিচ্ছেদ্য- আরো কত উপমাই দেয়া যায়। আরো কত বিশেষণে সাজানো যায়, আরো কত রঙে-ঢঙে রঙিন করা যায়; কত ছন্দ্য, শত গল্প আর কবিতাও লেখা যায় তার নামে। না লেখে কি উপায় আছে? তিনি যা করেছেন তা তো লিখে রাখার মতো করে, লিখে রাখতেই হবে, লিখতে হবে তার নাম, লিখতে হবে ‘নাসিম শাহ!’
বিপক্ষ দলের সেরা বোলারের মুখোমুখি। আগে ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে তিনটি বড় শিকার ধরেছেন ফারুকী। তার সামনে ‘পুচকে’ নাসিম শাহ পারবেন তো, পারবেন ১১ রান তুলে নিতে? প্রশ্নটা সবারই কমন, কিন্তু উত্তর! হয়তো ঘোর সমর্থকের কাছেও তখন তা এক আজব ধাঁধা। কখনো কোনো রানই না করা নাসিম শাহ কি করে পাড়ি দেবেন এই বাঁধার? ফলে ভরসা তো ছিলই না, শুধু ভাবছিল হয়তো; কোনো রকমে সিংগেল নিয়ে হাসনাইনকে দিতে স্ট্রাইকটা। তাতেও যদি হয় কিছু একটা…
ফারুকিকে ছক্কা হাঁকালেন। একটি নয়, পরপর দুই বলে দুটি ছক্কা। এ যেন কার্লোস ব্রাফেটের ফিরে আসা৷ তবুও তো ব্রাফেটের টি-টোয়েন্টি রানের অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু নাসিম শাহের কী ছিল? শুধু খানিকটা বিশ্বাস আর ইচ্ছা শক্তি। যার সুবাদে চোখ রাঙানো পরাজয়কেও হারিয়ে দিয়েছেন বিশ্বাসের বাহুবলে। দুই ছক্কায় রক্ষা করেছেন দেশের নাম, দেশের সম্মান।
মায়ের মৃত্যু যাকে টলাতে পারেনি, ভাঙতে পারেনি তার দৃঢ়তা, সেখানে কি করে ভয় পেতে পারেম আফগানের গোলা? ক্রিকেটের টানে যার অংশ নেয়া হয়নি মায়ের জানাজায়, দাফনে- সেই ক্রিকেটেই হারার আগে হেরে যাওয়া নাসিম শাহ মেনে নেন কী করে? তার বিশ্বাস ছিল, তিনি পারবেন। সংবাদ সম্মেলনেও দীপ্ত কণ্ঠেই বলেছেন, ‘আমি পারব, বিশ্বাস ছিল।’