শুক্রবার, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

আমতলীতে ২৭ দিন পর মারা গেলেন আগুনে দগ্ধ স্কুলছাত্র

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ বার পঠিত

বরগুনার আমতলীতে ২৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা গেলেন ৫ আগস্ট আগুনে দগ্ধ স্কুলছাত্র ইহতাশিমুল হক তেশাম (১৭)। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই ছাত্রের লাশ তার গ্রামের বাড়ি আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।

এর আগে রোববার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ছেলেকে হারিয়ে বাগরুদ্ধ প্রতিবন্ধি মা ইল্লিন বেগম ও বাবা রবিউল ইসলাম। জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসায় আগুন দেয় এক দল দুর্বৃত্ত।

এতে ওই বাসার দোতলায় আমতলী পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ি সড়কের বাসিন্দা আমতলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র রবিউল ইসলামের ছেলে ইহতাশিমুল হক তেশাম আটকা পড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ওই ছাত্র মেয়রের বাসায় আটকে ছিল। এতে সে আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।

পরে স্থানীয় ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চার ঘণ্টা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওই হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে তিনি ২৭ দিন চিকিৎসারত ছিলেন। ২৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছাড়া নেমে আসে। ছেলেকে হারিয়ে মা ইল্লিন বেগম ও ছোট দুই ভাই শেখ মো: আসাদুল্লাহ রায়হান ও শেখ হোসাইন আহম্মেদ ত্বোহা বাগরুদ্ধ হয়ে পরেছে।

তার মেঝ ভাই রায়হান আমতলী টেকনিক্যাল স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র ও ছোট ভাই ওয়াবদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। রোববার বিকেলে ইহতাশিমুল তেশামের জানাজা নামাজ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতে তেশামের লাশ গ্রামের বাড়ি আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের বাড়িতে নিয়ে আসে। সোমবার সকালে তার লাশের দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। হতদরিদ্র ইহতাশিমুল হক তেশাম লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ করত। তার আয় দিয়েই চলতে মা ও তিন ভাইয়ের সংসার। তেশামের মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার।

প্রতিবেশী অ্যানি আক্তার বলেন, ইহতাশিমুল হক তেশাম খুল ভালো ছেলে ছিল। কিন্তু তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তেশাম লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ করত। ওই আয় দিয়েই চলতো পরিবারের ভরণ পোষণ। মেঝ ভাই শেখ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ রায়হান বলেন, আমার ভাইকে দুবৃত্তরা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন।

প্রতিবন্ধি মা ইল্লিন বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর আর কিছুই রইল না। ক্যারে লইয়্যা মুই বাঁচমু। মোর পোলায় ল্যাহাপড়ার পর বিদ্যুতের কাম হরতো। তার আয় দিয়েই মোর সোংসার চালতো। এ্যাহন কি অইবে মুই কইতে পারিনা? বিলাপ করে আরো বলেন, ও আল্লাহ তোমার কি এমন ক্ষতি হরছিলাম মোর সোনার মানিকটাকে মোর কোল খালি হইর‌্যা লইয়্যা গ্যাছে?’ আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ওই স্কুলছাত্রের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com