বিপিএল ইতিহাসে আরও এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী হলো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটের দারুণ জয় তুলে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হলো ফরচুন বরিশাল।
১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দুর্দান্ত শুরু এনে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও তাওহীদ হৃদয়। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তুলেন ৭৬ রান। তবে এরপরই ধাক্কা খায় বরিশাল। কয়েক ওভারের ব্যবধানে ফিরে যান তামিম (২৯ বলে ৫৪), ডেভিড মালান (১), হৃদয় (৩২) ও মুশফিকুর রহিম (১৬)। চাপে পড়ে যায় বরিশাল।
মেয়ার্স-মাহমুদউল্লাহর বীরত্ব
ফাইনালের আগে তামিম বলেছিলেন, চাপ সামলানোর ক্ষমতাই নির্ধারণ করবে শিরোপার ভাগ্য। কথাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন কাইল মেয়ার্স। ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে সামনে টেনে নেন ক্যারিবীয় ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ১৯ বলে ২৬ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন।
শেষ ২৪ বলে বরিশালের দরকার ছিল ৩২ রান। উইকেটে তখন মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহ, সঙ্গে ড্রেসিংরুমে ছিলেন মোহাম্মদ নবি ও রিশাদ হোসেন। সমীকরণ কঠিন ছিল না, তবে চিটাগং কিংসের বোলাররা লড়াই করছিলেন দারুণভাবে। শরিফুল ইসলামের এক ওভারেই আউট হন মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহ। ফলে ১২ বলে দরকার পড়ে ২০ রান।
শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। প্রথম বলেই হুসাইন তালাতকে ছক্কা মেরে সমীকরণ সহজ করে দেন রিশাদ। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেলে স্কোর সমান হলে পরের বলেই ওয়াইড দিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন তালাত। টানা দ্বিতীয়বার বিপিএলের শিরোপা ঘরে তোলে বরিশাল, আর চিটাগংয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় আরও একবার।
চিটাগংয়ের ব্যাটিংয়ে ইমন-ক্লার্কের দাপট
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পারভেজ হোসেন ইমন ও খাওয়াজা নাফের দুর্দান্ত সূচনায় বড় সংগ্রহের ভিত পায় চিটাগং। ৫৭ রানে বিনা উইকেটে পাওয়ার প্লে শেষ করার পর ১৫.৪ ওভারেই দেড়শ পার করে ফেলে দলটি। ইমন ৪৯ বলে ৭৮ রান করেন, নাফে ৪৪ বলে ৬৬ রান করেন।
তবে শেষদিকে চোট পাওয়া গ্রাহাম ক্লার্ক (২৩ বলে ৪৪) খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাট করলেও গতি কমে যায় রান তোলার। শেষ ওভারে ক্লার্ক রান আউট হলে ১৯৪ রানেই থামে চিটাগং। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পারে তারা, যা হয়ে ওঠে পার্থক্য গড়ে দেওয়া মুহূর্ত।
বরিশালের বোলিংয়ে শরিফুলের ঝলক
বল হাতে বরিশালের সেরা পারফরমার ছিলেন শরিফুল ইসলাম। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তামিম-মালান জুটি ভেঙে বরিশালকে চাপে ফেলেন তিনি। পরে ফেরান ম্যাচের সেট ব্যাটার মেয়ার্স ও মাহমুদউল্লাহকেও। ৪ ওভারে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার।
শিরোপা ধরে রাখল বরিশাল
এই জয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিপিএলের শিরোপা জিতল ফরচুন বরিশাল। গতবারের মতো এবারও ফাইনালে নেতৃত্ব দিলেন তামিম ইকবাল। বিপিএলে তাদের এটি দ্বিতীয় শিরোপা। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের পর আরও একবার ফাইনালে এসে শিরোপা হাতছাড়া করল চিটাগং কিংস।
এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের মাধ্যমে শেষ হলো এবারের বিপিএল। শিরোপা জিতে উল্লাস বরিশাল শিবিরে, আর চিটাগংয়ের জন্য অপেক্ষা আরও এক বছরের!