আগামী ২২ আগস্ট থেকে প্রতিটি উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ আন্দোলন সফল করতে দশটি সাংগঠনিক বিভাগে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমের নেতৃত্ব দেবেন দলের একজন সিনিয়র নেতা। সদস্য থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রীয় নেতা, সভাপতি-আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক-সদস্যসচিব এবং দলের সাবেক সংসদ সদস্য। এ টিমের সমন্বয় করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা। তবে এ কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভও রয়েছে।
জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা প্রশ্ন রাখেন বারবার কেন তাদেরই পরীক্ষা দিতে হবে? তাদের দাবি, ঢাকা মহানগরকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা উচিত হলেও সেখানে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দিলে জনগণের সমর্থন বেশি পাওয়া যেত। এ ছাড়া আগামী ২২ আগস্ট থেকে যে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেখানে দলের সাবেক স্থানীয় এমপিদের রাখার নির্দেশনা নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাদের।
সাবেক এমপিদের অনেকেই আর দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নেই জানিয়ে ওই নেতারা বলেন, এখন তাদের (নিষ্ক্রিয় সাবেক এমপি) নিয়ে কর্মসূচি কর হলে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিভেদ আরও বাড়বে। এতে দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে আগামীকাল ১৯ আগস্ট জ্বালানি তেলের বিষয়ে সেমিনারের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে টেক ব্যাক বাংলাদেশ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সবাই চায় এ সরকারের পতন। বিএনপি আন্দোলনে আছে। ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু হবে।
এ আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে টিমপ্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, খুলনা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফরিদপুরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সিলেট বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং রংপুর বিভাগের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপিকে।
টিমের ঢাকা বিভাগের সমন্বয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে আছি। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মাঠে নামবেন। কারণ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ রকমভাবে দেশ চলতে পারে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ সরকারের পতন করে আমরা ঘরে ফিরব।
জানা গেছে, ১১টি অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনকে এ কর্মসূচি পালনে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে বলেছে বিএনপি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কাজ করছেন সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি টিম সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতা, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষ দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করবেন।
বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন জানান, আগামী ২২ আগস্ট থেকে ঘোষিত কর্মসূচি সুশৃঙ্খল এবং জনসম্পৃক্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১১টায় দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং টিমপ্রধান হাবিব উন নবী খান সোহেলের উপস্থিতিতে এ বৈঠক হবে।