খুব ভালো খেলার খেলার পর হঠাৎ করেই খেই হারিয়ে ফেলা কিংবা নাস্তানাবুদ হয়ে শক্তভাবে ফিরে আসা; পাকিস্তান ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের চরিত্র এমনই। তাইতো দলটির সঙ্গে সেঁটে গেছে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা। অর্থাৎ, যেই দলকে নিয়ে আপনি কোনো অনুমান করতে পারবেন না। এমন নজির দেখা গেল গতকাল রবিবারও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে।
চলমান এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ৬১৫ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশাল এই রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে ১৯৪ রানেই অলআউট হয় শান মাসুদের পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ৪২১ রানে পিছিয়ে থাকায় পাকিস্তানকে ফলোঅন করায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এক ভিন্নরূপ দেখায় পাকিস্তান। গতকাল কোনো উইকেট না হারিয়েই তুলে ফেলেছিল ২০৫ রান।
সাইম আইয়ুব ইনজুরিতে থাকায় প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও মাসুদের সঙ্গে ওপেনিং করেন বাবর আজম। এই দুজনই গড়েন রেকর্ড এই জুটি। দিনের শেষভাগে অবশ্য ৮১ রান করে আউট হয়ে যান বাবর। তাতে ১ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করে পাকিস্তান। ১৬৬ বলে ১০২ রান করে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক মাসুদ। আরেক পাশে ৮ রানে অপরাজিত নাইটওয়াচম্যাচ খুররম শেহজাদ। ইনিংস হার এড়াতে পাকিস্তানের এখনো ২০৮ রান প্রয়োজন।
পাকিস্তানের এমন বিপরীতধর্মী ব্যাটিংয়ের দিনে হয়েছে বেশ কিছু রেকর্ডও।
*২- বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান চক্রে একমাত্র দল হিসেবে দুইবার প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে ফেলার কৃতিত্ব দেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের আগে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে ফলোঅন করিয়েছিল দলটি। এই চক্রে একবার ফলোঅনে ফেলানো অন্য দলটি হলো শ্রীলংকা। গলেতে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬০২ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর কিউইদের ৮৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে ফলোঅন করেছিল শ্রীলংকা। ২০২০ সালে সাউদাম্পটন টেস্টের পর এই প্রথম ফলোঅনে পড়ল পাকিস্তান।
*২০৫- ফলোঅনে পড়ার পর মাসুদ ও বাবরের ২০৫ রানের জুটিই ওপেনিংয়ে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এই দুজন ছাড়িয়ে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা গ্রায়েম স্মিথ ও নেইল ম্যাকেঞ্জিকে। লর্ডসে ২০০৮ সালে ফলোঅনে পড়ার পর ২০৪ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন এই দুজন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটিই সর্বোচ্চ উদ্বোধনী রানের জুটি। এছাড়া প্রথম উইকেটে মাত্র দ্বিতীয় শতাধিক রানের জুটি এটি।
*১-পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি করলেন মাসুদ। এর আগে, ১৯৯৫ সালে জোহানেসবার্গে সেলিম মালিকের ৯৯ রানই ছিল সর্বোচ্চ। অধিনায়ক হিসেবে ২০০৭ সালে গেবরাহায় ইনজামাম-উল-হকের ৯২ রান তৃতীয় সর্বোচ্চ।
*৪২১- প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার এই লিড টেস্টে তাদের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ। টেস্টে প্রথমে ব্যাটিং করে ৬১৫ রান দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। অন্যদিকে, এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো চার শ’র বেশি লিড হজম করল পাকিস্তান।
*১৮ বছর ২৭২ দিন- দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার এখন কিয়েনা মাফাকা। ম্যাচের তৃতীয় দিনে বাবরের উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকনিষ্ঠ উইকেট নেওয়া ক্রিকেটারও হলেন তিনি।
*৩- সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ফিফটি করার পর চলমান টেস্টের দুই ইনিংসেই ফিফটি পেয়েছেন বাবর আজম। ক্যারিয়ারে এই প্রথম টানা তিনটি ফিফটি পেয়েও তার একটিও সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারলেন না বাবর।