ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুতে বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষরণের মুখে পড়তে পারে। আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাংলাদেশের অন্যান্য কেন্দ্রের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। এমনকি কয়লার মূল্যও ধরা হয়েছে দেশের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। এতে আদানির বিদ্যুৎ কেনায় খরচ পড়বে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয়ের প্রায় তিনগুণ। ভারত থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম যেখানে ৬ টাকা পড়ছে, সেখানে আদানির প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কেনার খরচ পড়বে ১৬ থেকে ১৭ টাকা। এ অবস্থায় দেশে যেখানে এ সময়ে বাস্তব বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, সে অবস্থায় আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
ক্যাপটিপ পাওয়ার বাদ দিয়েই বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২২ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় গ্রীষ্মে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট, শীতকালে যা ৯ হাজার মেগাওয়াট নেমে আসে। দেশে এমনিতেই বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার কারণে বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদাই নেই। তার উপরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেকগুলো বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে আদানির ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ আমদানি কার স্বার্থে, সেই প্রশ্ন উঠেছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিনা টেন্ডারে ভারতের কোম্পানি আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ কেনা মোটেও ঠিক হবে না। কারণ দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ২৬ হাজার মেগাওয়াট হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। আর এটা সমন্বয় করা হচ্ছে জনগণের ঘাড়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে। এ অবস্থায় ভারতের কোম্পানি আদানির কাছ থেকে কেন বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল কি না তা জনগণ জানে না। কিভাবে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ হলো তাও কারো জানা নেই। এ কারণে আদানির সাথে বাংলাদেশে সম্পাদিত চুক্তি জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হোক। কারণ জনগণই ক্রেতা। জনগণই বিদ্যুৎ কিনবে। সুতরাং জনগণের অন্ধকারে রেখে বিদ্যুৎ চুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠানে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তাতে আদানি থেকে অন্য সূত্রের প্রায় তিনগুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। আবার ক্যাপাসিটি চার্জও বেশি দিতে হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ভারতের কোম্পানির সাথে করা ২৫ বছরের চুক্তি অনুযায়ী শুধু আদানিকে ক্যাপাসিটি চার্জই বর্তমান ডলার মূল্যে এক লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সামনে ডলারের দাম বেড়ে গেলে ক্যাপাসিটি চার্জ আরো বেশি পরিশোধ করতে হবে।
পাওয়ার সেলের সাবেক এ মহাপরিচালক আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় উদ্বৃত্ত। এর মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে বাংলাদেশের আরো বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হবে, অথবা আদানির বিদ্যুৎ না কিনেই বাংলাদেশকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে। এটি সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। তাই এ প্রক্রিয়া থেকে কিভাবে বের হওয়া যায়, সে চেষ্টা করা উচিত। সোজা কথা চুক্তি বাতিল করতে হবে; অন্যথায় দেশের রক্তক্ষরণ আরো বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কোম্পানি আদানির কাছ থেকে আর এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে চূড়ান্ত চুক্তি হয় ২০১৭ সালে। এ বিদ্যুতের একটি অংশ আগামী মার্চ থেকে আসার কথা। অন্য দিকে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে দুই ফেজে যথাক্রমে ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালে চুক্তি করে পিডিবি। প্রথম চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর ও দ্বিতীয়টির ১৫ বছর। এর বাইরে সেম্বকর্প ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট ও পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালেই। এ দুই চুক্তির মেয়াদও ১৫ বছর। আর ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হয় গত বছর। তবে চুক্তির মেয়াদ আরো পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ প্রায় শেষ করেছে কোম্পানিটি। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত আরো প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করছে আদানি। এখন ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসছে। এই কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আদানির সাথে চুক্তি অনুসারে, আদানির বিদ্যুৎ কিনতে প্রতি ইউনিট তথা কিলোওয়াট/ঘণ্টা ক্যাপাসিটি চার্জ তিন দশমিক ৮০ সেন্ট। ফলে ৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) প্রতি মাসে এ বাবদ ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে তিন কোটি ৭৭ লাখ ২৬ হাজার ডলার বা ৩২০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ৪৫ কোটি ২৭ লাখ ১৭ হাজার ডলার বা প্রায় তিন হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আর ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি, যা তিনটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও বেশি। তবে ডলারের বিনিময় হার বাড়লে ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আদানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম যত বেশিই হোক না কেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আদানির সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ কয়লার দাম আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী দেবে। এতে জ্বালানি খরচ বেশি পড়বে।
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি ভারতে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালায়, এগুলো অধিকাংশই সমুদ্রের কাছে; যাতে সড়ক অথবা রেলে কয়লা পরিবহনের খরচ কমানো যায়। কিন্তু গোড্ডার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্দর থেকে বেশি দূরে হওয়ায় কয়লা পরিবহনে বাড়তি ব্যয় বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। এতে আদানির ব্যবসা হলেও বাংলাদেশের জন্য তা বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
আদানি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম যত বেশিই হোক না কেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আদানির সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ কয়লার দাম আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী দেবে। এতে জ্বালানি খরচ বেশি পড়বে। এতে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬-১৭ টাকায় কিনতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদিত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮-৯ টাকা। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হয় প্রতি ইউনিট ৬.১১ টাকায়। বাংলাদেশের সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৪.৭৫ টাকায় আর পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করে ৫.০২ টাকায়। সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিসাবে পরিচিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কিনতে বিদ্যুতের দাম পড়ে ৯.৮০ টাকা। সব মিলিয়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের গড় ব্যয় পড়ে ৮.৮৪ টাকা। আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে এর দ্বিগুণ মূল্যে। এই বিদ্যুৎ আমদানির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে, তাদের পাওয়া গোপনীয় ১৬৩ পৃষ্ঠার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি তিনজন শিল্প বিশ্লেষক দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫ বছর মেয়াদি গোড্ডা চুক্তি বাংলাদেশের পক্ষে খুব কমই সুবিধাজনক। সিডনি-ভিত্তিক বিশ্লেষক টিম বাকলির মতে, প্ল্যান্টটি উৎপাদনে আসার পর, বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার আদানিকে দিতে হবে প্ল্যান্টের ক্ষমতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের চার্জ হিসেবে। এই কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ বাংলাদেশ না নিলেও চুক্তি অনুসারে এই অর্থ দিতে হবে। বাংলাদেশ কখন বিদ্যুৎ পাবে তাও স্পষ্ট নয়, কারণ এর সঞ্চালন লাইনের একটি অংশ নির্মাণ শেষ করেনি। এমনকি এই প্ল্যান্টের বিদ্যুতের কোনো প্রয়োজন বাংলাদেশের না হতে পারে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশে এখন সর্বোচ্চ চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।
লণ্ডভণ্ড করপোরেট সাম্রাজ্য আদানি গ্রুপের ভবিষ্যৎ কী?
এ দিকে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানি মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৯ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বা দুই-পঞ্চমাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে। আর ব্যক্তিগত সম্পদের দিক থেকে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি হারিয়েছেন আদানি। বছরের শুরুতে যেখানে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ছিলেন, এখন শীর্ষ দশেও নেই তিনি। তার ওপর গত ১ ফেব্রুয়ারি আদানি এন্টারপ্রাইজেসের প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের নতুন শেয়ার (এফপিও) ছাড়ার প্রক্রিয়া হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। এসবের ফলে ভারতের অন্যতম শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আদানি গ্রুপে এমন করুণ দশার কারণটা দেখলে অনেকটা পাহাড়ের গায়ে তীরের আঘাতে রক্তক্ষরণের মতো মনে হতে পারে। ভারতীয় এ করপোরেট জায়ান্টের বিষয়ে গত ২৪ জানুয়ারি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এতে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজ’ আখ্যা দিয়ে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কারসাজি, আর্থিক জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। আদানি গ্রুপ হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনের সব তথ্যকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ এবং প্রতিবেদনটিকে সরাসরি ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের দাবি, আদানি গ্রুপ আইন মেনেই সব কিছু করেছে। কিন্তু এতেও আস্থা ফেরেনি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, সুইস ব্যাংক ক্রেডিট সুইস তার প্রাইভেট ব্যাংকিং ক্লায়েন্টদের মার্জিন ঋণের জামানত হিসেবে আদানি গ্রুপের বন্ড গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ারের দর প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। গোষ্ঠীটির অন্য কোম্পানিগুলোও পিছিয়ে পড়েছে। এমন ‘অভূতপূর্ব’ বাজার পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত নতুন শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা স্থগিত করে আদানি গ্রুপ।
আদানি গ্রুপকে ভারতের বিজেপি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আনুকূল্যপ্রাপ্ত শিল্প গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। তারা মুম্বাইয়ের কাছে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করছে, তিনটি সমুদ্রবন্দরে ব্যয় করছে মোট ৫০০ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরীয় সংস্থা পোস্কোর সাথে অংশীদারিত্বে ৫০০ কোটি ডলারের একটি ইস্পাত কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। তাদের নবায়নযোগ্য ও হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রকল্পগুলো ভারতকে শুদ্ধ জ্বালানির পাওয়ার হাউজে পরিণত করার প্রচেষ্টার ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। এসব প্রকল্পের জন্য প্রচুর পুঁজি প্রয়োজন। আর সেটি সংগ্রহেই নতুন শেয়ারবাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল আদানি গ্রুপ। কিন্তু যদি গোষ্ঠীটির বন্ডের দেনা বাড়ে এবং শেয়ারের দাম কমে যায়, তা হলে প্রয়োজনীয় তহবিল জোগাড় করা কঠিনই হবে।
এরই মধ্যে আদানি গ্রুপের এই সংকটের পরোক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তার অংশীদারদের ওপরও। গত ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কোম্পানি এলআইসি এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শেয়ারের দম কমে গেছে যথাক্রমে আট ও পাঁচ শতাংশ। গত ২৭ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি মাত্র দুই দিনে ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছে বৈশ্বিক তহবিলগুলো। এ অবস্থায় পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হয়তো ভারতীয় টাইকুনদের সাথে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আগে দু’বার চিন্তা করবে।