ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার প্রভাব পড়েছে গাইবান্ধার কোটি কোটি টাকার সোনার হরিণ পাওয়া আওয়ামী লীগের এমপি ও ডাকসাইটে নেতাদের ওপর। ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মী ও এমপিরা। আত্মগোপনে রয়েছেন গাইবান্ধা আওয়ামী লীগের ৫ এমপিসহ ডাকসাইটে নেতারা।
এতে অভিভাবকশূন্য সংকটময় এ দিনগুলোতে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে চলে গেছেন গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র এমপি নাহিদ নিগার। তার মা সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গাইবান্ধা-২ আসনের এমপি শাহ সরোয়ার কবিরও লাপাত্তা রয়েছেন। অনেকের ধারণা, তিনি শহরে বিএনপি-জামায়াতের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। জেলার অনেক নেতার বাড়িঘরে হামলা হলেও এমপি সরোয়ারের বাড়ি রয়েছে অক্ষত। সাবেক হুইপ মাহবুব আরা গিনির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে মাহাবুব আরা বেগম গিনিরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তার ভাতিজা বলে পরিচিত যুবলীগ নেতা রাজিব আহসান ১৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে রাজপ্রসাদ বানিয়েছেন শহরের প্রাণকেন্দ্রে। তার প্রাসাদও এখন জনশূন্য।
গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিও এখন লাপাত্তা। তিনি এখন কোথায় রয়েছেন জানেন না স্থানীয় নেতারা।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি গাইবান্ধায় কোনো আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতা তার নগরীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। তিনি নাকি স্পেশাল কাজ ও কোঠায় অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা বানিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছেন জনতার আড়ালে।
গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসনের এমপি আবুল কামাল আজাদও নেতাকর্মীদের রেখে নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাকে মাঠে দেখেননি তার কর্মী-সমর্থকরা। তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ঘটনার আগেই ৪ আগস্ট রোববার সপরিবারে উড়াল দেন যুক্তরাষ্ট্রে তার শ্বশুরের কাছে।
অথচ আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার নেতাকর্মীরা। শুধু এমপিরাই নয়; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মীই রয়েছেন আত্মগোপনে। তাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি তৃণমূলের কর্মীদের এতদিন যে আস্থা ছিল, তা এখন আর নেই। তাদের কেউই কল্পনা করতে পারেননি শেখ হাসিনা এভাবে দেশত্যাগ করবেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মনোবল ভেঙে গেছে। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন, সেটাও কেউ কোনোদিন কল্পনা করতে পারেননি।
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, স্বৈরশাসক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণকে কোণঠাসা করে রেখেছিল। ভয়ে জনগণ মুখ খুলতে পারেনি। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটাকে আবার স্বাধীন করেছে। এ বিজয় ধরে রাখতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
স্থানীয়রা বলেন, সাবেক হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি ও গাইবান্ধা-৩ পলাশবাড়ি আসনের এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতির ব্যবহারে মানুষ ক্ষুব্ধ। তিনি মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। শুধু টাকার পেছনে ১৫ বছর অতিবাহিত করে টাকার পাহাড় বানিয়ে এখন আত্মগোপনে গেছেন।