বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পক্ষে জনসমর্থন এবং দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। আজ বুধবার প্রথম গণসমাবেশ হচ্ছে চট্টগ্রামে।
গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির ১০ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জানা গেছে, আজ বুধবার চট্টগ্রামের সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকার মহাসমাবেশেও তিনি প্রধান অতিথি থাকবেন। বাকি আট বিভাগীয় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশ থেকে জাতীয় সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি তোলা হবে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার তীব্র প্রতিবাদও জানানো হবে এসব সমাবেশে।
সম্প্রতি রাজধানীর ১৬ এলাকায় সমাবেশ করে বিএনপি। এসব কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের জনম্পৃক্ততা বেড়েছে। ঢাকা শহরে হয়েছে, আগে জেলা-উপজেলায় হয়েছে, সেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা অনেক গুণ বেড়েছে। আজ বাংলাদেশের জনগণের মাঝে একটিই দাবি উপস্থিত হয়েছে দিস গভমেন্ট মাস্ট গো।’
বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে মাঠে ১০টি টিম কাজ করছে। চট্টগ্রামে টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। চট্টগ্রামের বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলোয় গত কয়েক দিন ধরে প্রতিনিয়ত বৈঠক করে যাচ্ছেন।
মো. শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, ‘চট্টগ্রামের গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এই সমাবেশ থেকে সরকারকে গাণিতিকভাবে বুঝিয়ে দেব, তাদেরকে দেশের মানুষ চায় না। চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে সরকারের পতনের ঘণ্টা বাজবে।’
এ ছাড়া ময়মনসিংহে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান; খুলনায় প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। রংপুর বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হারুন-উর রশিদ; বরিশাল বিভাগে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল; ফরিদপুরে প্রধান উপদেষ্টা দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার; সিলেট বিভাগীয় টিমের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, দলনেতা যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও দলনেতা ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু; রাজশাহী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও দলনেতা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু; ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে টিমের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলনেতা হিসেবে আছেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিটি টিম সমাবেশ সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। যেভাবে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, তা হলে প্রতিটি সমাবেশই স্মরণকালের বড় সমাবেশ হবে।
খুলনা মহানগর বিএনপির নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল আমাদের সময়কে বলেন, খুলনায় কয়েক লাখ মানুষের সমাবেশ হবে। এ সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জবাব দেবে খুলনাবাসী।
চট্টগ্রাম সমাবেশে টার্গেট কয়েক লাখ
চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উজ্জীবিত বিএনপি। আজ বুধবার দুপুর ২টায় নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে এ সমাবেশ হবে। ২০১১ সালের পর বন্দরনগরীতে এটিই হতে চলেছে বৃহত্তম গণসমাবেশ।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, ২০১১ সালে নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমাবেশে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছিল। সেটি ছিল চট্টগ্রামের স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ। এর পর বিভিন্ন সময় নগরীতে কয়েকটি বড় সমাবেশ হলেও সেই সমাবেশের মতো উপস্থিতি আর হয়নি। বুধবারের সমাবেশও হবে ২০১১ সালের সমাবেশের মতোই বিশাল।