মঙ্গলবার, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

আজ কুড়িয়ে পাওয়া রিয়েল হিরো – আইভি সাহা

আইভি সাহা ( গৌরনদী ):
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২০৭ বার পঠিত

ঘটনাগুলো আজ নতুন কিছু নয়! কিন্তু আজ আমার খুব কাছ থেকে জানা একটা ঘটনা নিয়ে লিখছি। সকালে আমার মেয়ে অর্থির ফোন ডক্টরস কোয়াটার থেকে ( নোয়াখালী সরকারি হাসপাতাল) আমাকে বলল,মাম্মাম একটা বাবুকে পাওয়া গিয়েছে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের কাছ থেকে। বাবুটা এখন ডাক্তারদের হেফাজতে আছে।

মাম্মাম তোমার কী এই বাবুটা লাগবে? আমি উত্তরে বললাম, ‘আমি এই বেবিটাকে হঠাৎ করে এনে কি করে সামলাবো? তোমরা দুইবোনতো এখনো বেবি আমার।তোমাদের সামলাতেই আমি হিমশিম খাচ্ছি’। আমি আরও উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম মেয়ের কাছে, “এই বাবুটা ছেলে নাকী মেয়ে বাবু”?
উত্তরে বলল, ‘জানিনা এখনো, তবে এখনই হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু জানতে পারবো বিস্তারিত’

এর পর জানলাম সবকিছু:
ছেলে একটা বেবি প্ল্যাসেন্টা সহ আজ ভোরবেলাতে রেখে গেছেন কোনো একজন মা কিংবা বেবির ঘনিষ্ঠজনেরা। যেহেতু ওর শরীর থেকে তখনও নাড় কাটা হয়নি তখনও। প্ল্যাসেন্টা সহ ওকে হাসপাতাল এরিয়াতে পাওয়া গেল একটা কাটাযুক্ত ঝোপের ভেতর হাসপাতালের প্রাচীর ঘেঁষে। ঠিক এই দিক দিয়ে একজন পথচারী যাচ্ছিলেন বাইক চালিয়ে। তিনি কিছু একটা নড়তে চড়তে দেখে বাইক থামিয়ে থমকে দাঁড়ালেন। মহানুভবতা নিয়ে সাহস করে সদ্যোজাত শিশুটিকে তুলে নিয়ে চলে এলেন গাইনি ওয়ার্ডের লেবার রুমে। সেখানে কর্তব্যরত সিনিয়র সিস্টার ছিলেন বীথিকা দিদি।

বীথিকা দিদি শিশুটিকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে শংকামুক্ত করেন। বাচ্চা কেঁদেছে তখন। ওর কপালে একটু করে কেটে যাবার চিহ্ন রয়েছে। হয়তো ঝোপের ভেতর ওকে কোনো পশু পাখিদের হিংসার স্বীকার হতে হয়েছিল। ওর গায়ে ভোরের বেলায় মশার কামড়ের চিহ্ন রয়েছে কিছু। আমার মেয়ে ডাঃ অর্থি কোলে তুলে নিয়ে রেখেছে ওকে। গাইনি ওয়ার্ড থেকে অন্য মায়ের দুধ এনে ওকে খায়ানো হয়েছে বারে -বারে।

আমার মেয়েটা ভীষণ নরম মনের একজন জুনিয়র ডাক্তার। এমন করে কত যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে ওর নতুন করে। মানুষের এমন সব অদ্ভুত কর্মকান্ড দেখে নির্বাক হয়। কখনো কাঁদে,কখনো প্রশ্ন থাকে মনে অনেক। এই নিস্পাপ শিশুকে কী করে আমাদের বাসায় নিয়ে নিজেদের কাছে রাখা যায়, সেই থেকে আমাকে অনেক অনুরোধ করেই যাচ্ছে। মন খারাপ হচ্ছে ওর বারবার! মেয়ে বাসায় ফিরে আমাকে ছবি দেখালো নতুন বেবিটার, আমি কাঁদলাম! ভাবলাম কেন এমন নিষ্ঠুরতম আচরণ হলো এই নিস্পাপ শিশুটির সঙ্গে।

কত নারীর হাহাকার থাকে একটি সন্তানের জন্য! কিন্তু এমন করে ফুটফুটে শিশুটির পড়ে থাকার গল্প আজ মনটাকে আরও কাঁদিয়ে গেল।
আশার কথা হলো, হাসপাতালে খবর পেয়ে এই একদিনের বেবিটাকে নেবার জন্য বহু মানুষের আনাগোনা চলছে। কেউ কেউ এসেছে দেখতে উৎসুক জনতা হয়ে ভিড় করে। এমন দৃশ্য দেখে আমার মেয়ে অর্থি বলছে,’তুই আজ রিয়েল হিরো’ ফেলে গেল তোকে তাতে কি হয়েছে? তোর জন্য কত লোক হুমরি খেয়ে পড়ে আছে,দেখ চেয়ে তোর জন্য কত লোকজন আজ এখানে ‘

পুলিশের একজন এস,আই,দম্পতির দশ বছর ধরে বাচ্চা নেই তাঁরা দুজনেই এই বেবিকে নেবার জন্য অধীর আগ্রহের সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক করছেন। কারণ বেবি এখন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। সুস্থ হলে থানায় ওকে হ্যান্ডওভার করার নিয়ম রয়েছে। এর পর ওখান থেকে আগ্রহী দম্পতির কাছে বেবিকে দেওয়া হবে। হাসপাতালে ওর জন্ম হয়নি তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই শিশুটি কাউকে দিতে পারবে না আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া। বাচ্চার ছবি দেখে ভীষণ মায়া লাগলো, কিন্তু যারা ওকে নিয়ে সব না পাওয়াগুলোকে ভুলে যাবেন, তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠুক। বেড়ে উঠুক কোনো শূণ্য বাবা-মায়ের কোল আলো করে।

আজ হয়তো ওর জন্মদাতা মা-বাবার কোল এই শিশুটির জন্য নিরাপদ হলো না। কিন্তু আশীর্বাদ ও শুভকামনা রইল, এই সুন্দর পৃথিবীর বড় একটা অংশ হিসেবে ও বেঁচে থাকুক পরম আনন্দ আর নিবিড় মমতায় মানবতার শীতল ছায়ায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com