বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ইরি ও বোরো ধান চাষাবাদের সঙ্গে জমির পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হচ্ছে বেশ কয়েক বছর থেকেই। এরইমধ্যে উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের বিল অঞ্চলের পতিত জমিতে কুমড়ার চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। ওই অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়ায় চাষিরা কুমড়ার বেশ ভালো ফলন পেয়ে থাকেন। শুধু যে মিষ্টি কুমড়া এমনটা নয়, এ গাছের পাতাও শাক হিসেবে বেচা হয়।
এদিকে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের পাশাপাশি উঁচু পতিত জায়গা ফাঁকা না রেখে সাথী ফসল হিসেবে অল্প খরচে বেশি লাভবান করতে কৃষকদের মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
স্থানীয় কৃষক দীপক জয়ধর বাংলানিউজকে বলেন, আমি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস এনজিও থেকে তাদের দেওয়া পাঁচ প্যাকেট কুমড়ার বীজ দিয়ে চাষ শুরু করি এবং সফলতা পাই। আমার দেখাদেখি এখন অনেক কৃষকরাও কুমড়া চাষ করছেন। বীরেন ভদ্র, সাধন মৃধা, শম্পা রানি, মিনাল পান্ডে, রমনী বকুলা, পরিমল মণ্ডল, আরতী হালদার, অনিল বাড়ৈসহ অনেক কৃষক পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করে এরইমধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তারা জানান, প্রতি মণ হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া এখন ৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এর প্রতিটি কুমড়া প্রায় ৩-৮ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যা পাইকারদের হাত ধরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। তবে স্থানীয়রা সরাসরি জমি থেকেই কুমড়া কিনতে পারছেন ।
আগৈলঝাড়ার বাহাদুরপুর গ্রামের অনিতা ভদ্র বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে তিনি ইরি-বোরো জমির পাশের পতিত জায়গায় কুমড়ার চাষ করছেন। গত বছর কুমড়া চাষ করে জমিতে বসেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাড়তি আয়ের এই টাকা দিয়ে তার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ব্যয়ভার পূরণ করছেন। এবার ফলন ভালো হওয়ায় আরও বেশি বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
বাটরা গ্রামের রমনী সরকার বলেন, উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকেই কিনে নিচ্ছেন। এতে আমরা দাম কিছু কম পেলেও, সময় ও শ্রম বেঁচে যাওয়ায় লাভ বেশিই পাচ্ছি বলে মনে হয়। এছাড়াও প্রতিটি বাড়ির গৃহিণীরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রোপণ করেন।
অন্য চাষিরা জানান, এই অঞ্চলের উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুমড়ার ভালো ফলন পাওয়া যায়। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে বেশ ভালো দামে বিক্রি করা যাচ্ছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমসহ চাষে খরচ কম হওয়ায় দিন দিন স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সরকারি সহায়তা পেলে তারা উৎপাদন আরও বাড়াতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ফলন বেশি হলে দাম কিছুটা কমে যায় জানিযে কৃষক দীপক জয়ধর বলেন, আমি প্রতিবছরের মতো এবছরও আমার পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলন বেশি পাওয়া গেলে দর কমে যায়। আর কম ফলন পেলে দাম বেশি থাকে।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার পতিত থাকা জমিতে অত্যন্ত কম খরচে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের। চলতি বছর আগৈলঝাড়ায় ১৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসী, বারি, মনিকাসহ স্থানীয় জাতের কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকায় কৃষকরা অধিক ফলন পেয়েছে। এখানকার উৎপাদিত কুমড়া বেশ বড় এবং মিষ্টি।
আমরা কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া আগামীতে কুমড়া চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।