দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ব্যালটে নাকি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে, পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে আধুনিক যন্ত্রের গ্রহণযোগ্য ও ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময় করেছে ইসি। যদিও বিএনপিসহ ১১টি দল সেই মতবিনিময়ে অংশ নেয়নি। অংশ নেওয়া ২৮ দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১১টি দল ইভিএমের পক্ষে মত দিয়েছে। ১৭টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিপক্ষে মত দিয়েছে। এর মধ্যে ১০টি দল সংশয় ও আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করে বিপক্ষে মত দেয়। আর অবস্থান স্পষ্ট করেনি ৭টি দল। ফলে আগামী নির্বাচনে ব্যালট পেপার নাকি ইভিএমে, সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুর আউয়াল বলেছেন, আমাদের সামর্থ্য কতগুলো তা দেখব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। সম্পূর্ণ বা ফিফটি-ফিফটি করব কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেব। আগস্ট থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব, তখন সব আলোচনা করব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ একজন সদস্য বলেছেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সব আসনে ইভিএম চায়। এতে নির্বাচন কমিশনও চাপে পড়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আশঙ্কা তার।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরামর্শ দিতে নিবন্ধিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। ইভিএম যাচাইয়ে আইটি বিশেষজ্ঞসহ সর্বোচ্চ ৪ জন আসার জন্য প্রতিটি দলকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
গত ১৯ জুন প্রথম দিনে জাতীয় পার্টিসহ ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি যায়নি। জাতীয় পার্টি ছাড়া অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হলো- জাতীয় পার্টি- জেপি, বিএনএফ, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণফ্রন্ট, মুসলিম লীগ, জাকের পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ। আলোচনায় ১০টি দল অংশ নিলেও কেউ কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়ে যায়নি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক হতে পারে, কিন্তু সারাদেশে ৩০০ আসনে ইভিএমে হলে এটা হ্যাজার্ড হয়ে যাবে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক, তা আমরা চাই না।
গত ২১ জুন দ্বিতীয় ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। সেখানে বিএনপিসহ ৫টি দল অংশ নেয়নি। অংশ নিয়েছিলÑ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। অংশ নেয়নি- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)।
গত ২৮ জুন ক্ষমাতসীন আওয়মী লীগসহ ১৪টি দল অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেয় ১০টি দল। অনুপস্থিত চারটি দল হলো- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এলডিপি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি।
অংশ নেয়Ñ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল- এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও গণফোরাম।’
জানা গেছে, নিবন্ধিত ৩৯ দলের মধ্যে ১১টি দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। অংশ নেওয়া ২৮ দলের মধ্যে ইভিএম-এর পক্ষে মত দেয় ১১টি দল। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১০ দল। নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি ৭টি দল।
রাজনৈতিক দলের আগে সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন সদস্য ও বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। সভায় তারা জাতীয় ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন।
বর্তমানে ইসির কাছে মাত্র দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করলে সাড়ে ৪ লাখ মেশিনের দরকার হবে। সেক্ষেত্রে আরও ইভিএম ক্রয় করতে হবে।