নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনে রাজি। আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক সমঝোতা করতে হয় তাহলে এতটুকু পর্যন্ত দিবে। মার্কিন প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল এখন বাংলাদেশ সফর করছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে এই পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এই পর্যবেক্ষক দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সাথেও বৈঠক করেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গেও তারা বৈঠক করবে। গতকালকের বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরাসরি ভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরকে বলা হয়েছে যে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানবে না। এই দাবি অযৌক্তিক এবং অসংবিধানিক। আদালত কর্তৃক এই দাবিকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে এখনও সমঝোতার পথ রয়েছে এবং বিএনপি এই সমঝোতা না হওয়ার জন্য দায়ী।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সমঝোতার জন্য কতটুকু পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রায় অভিন্ন বক্তব্য বলেছেন। তারা বলেছেন যে যেহেতু এখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব না। তবে একইভাবে নির্দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন করা বর্তমান সংবিধানের আওতায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে আওয়ামী লীগ মনে করেন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। এমনকি বিএনপি যারা সংসদে নেই তারাও এই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন যে এরকম একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব ২০১৩ সালেও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, সেটি হতে পারে সমঝোতার ভিত্তি যদি সকল রাজনৈতিক দল রাজি থাকে এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা যেতে পারে যে মন্ত্রিসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে বিএনপি সংসদে নেই। তাহলে তারা কিভাবে সংসদে থাকবে। এর জবাবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, যদি ১০ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা হয় তাহলে বিএনপির একজন সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আবার যদি ২০ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থাকে তাহলে বিএনপির দুইজন মন্ত্রিসভার সদস্য থাকতে পারেন। কারণ মন্ত্রিসভার এক দশমাংশ সদস্য অনির্বাচিত থাকার সুযোগ রয়েছে। আর জাতীয় সংসদে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদেরও প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভায় রাখা হতে পারে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে সমঝোতার জন্য আওয়ামী লীগ এতটুকু পর্যন্ত ছাড় দিতে পারে। এর বাইরে আর কোন ছাড় আওয়ামী লীগ দেবে না। অন্তত নির্বাচনের ব্যাপারে তো নয়।