এমনটাই অনুমান করা যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তাই ঘটল। রায়হান রাফীর মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন উপযোগী নয় বলে চূড়ান্ত রায় দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড।
সিনেমা সংশ্লিষ্টদের লম্বা সময় অপেক্ষা করানোর পর গতকাল বুধবার এই সিদ্ধান্ত জানান বোর্ডের উপপরিচালক মো: মঈনউদ্দীন। লিখিত চিঠিতে জানানো হয় ছাড়পত্র না দেওয়ার পেছনে চারটি উল্লেখযোগ্য কারণ। সেগুলো হলো-
১. সিনেমাটিতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে।
২. কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে।
৩. এ ধরণের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
৪. সিনেমার কাহিনি/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
এছাড়া সেন্সর বোর্ডের সদস্যগণ আরও মতামত দেন যে, ‘দ্য কোড ফর সেন্সরশিপ অব ফিল্মস ইন বাংলাদেশ, ১৯৮৫ এর ১-এর I, V, VII দফায় বর্ণিত উপাদানসমূহ সিনেমাটিতে বিদ্যমান থাকায় এটি জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শন উপযোগী নয়। তাই বাংলাদেশ সেন্সরশিপ আইনের বিধি ১৬(৫) মোতাবেক উক্ত সিনেমার সেন্সর আবেদনপত্র নির্দেশক্রমে অগ্রাহ্য করা হলো।’
তবে, এই সিদ্ধান্তপত্র প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সিনেমাটি প্রদর্শনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সরকার বরাবর আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে প্রযোজক-পরিচালকদের।
ফজলুল হক ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্ট্যাডিজের পক্ষে ‘অমীমাংসিত’র প্রযোজক শহিদুল আলম সাচ্চু। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিন’র জন্য নির্মিত।
ওটিটি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এখনও সেন্সর কার্যকর হয়নি। তবু চিঠি দিয়ে নিজেদের আগ্রহে রায়হান রাফী নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ দেখতে চায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড! গেল মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিনেমাটি জমা দেওয়া হয়। তখন নির্মাতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, তার সিনেমা ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। কারণ তিনি এমন কোনও কনটেন্ট নির্মাণ করেননি, যেটা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।
না, রাফীর আত্মবিশ্বাস বাস্তবে ফলেনি। সেন্সর জটিলতায় আটকেই গেল ‘অমীমাংসিত’। এরমধ্যে টিজার-ট্রেলার প্রকাশ করে কয়েক দফা এটি মুক্তির তারিখ পেছানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইস্ক্রিন’র প্রকল্প পরিচালক ও নায়ক রিয়াজ আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ঈদে ঘোষণা দিয়েও বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারিনি। এরজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়া সাপেক্ষে, অতি দ্রুত সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা রাখছি। কারণ, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সিনেমার টিজার প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটা দেখে অধিকাংশ দর্শক আঁচ করেছেন, এটি আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড ঘিরে নির্মিত। যেই ঘটনার রহস্য এক যুগ পেরিয়ে এখনও খোলাসা হয়নি।
সিনেমার মুখ্য চরিত্রে আছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন। এছাড়া আরও কয়েকজন অভিনয়শিল্পী আছেন, তবে পোস্টার ও টিজারে তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেন গল্পের রহস্য আরও ঘনীভূত করতে চেয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু এখন এর মুক্তি নিয়েই পোহাতে হচ্ছে নতুন রহস্য-জটিলতা-অনিশ্চয়তা। তাহলে, এভাবেই কি সবকিছু অমীমাংসিত থাকবে, প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।