বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে টাকা ও দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের। সম্প্রতি এসবের প্রমাণও মিলেছে অনুসন্ধানে।
টাকা ছাড়া পাসপোর্ট অফিসে ফাইল নড়ে না এমন অভিযোগের প্রমাণ খুঁজতে ছদ্মবেশে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনে হাজির হয় সময়ের টিম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই রাজ ট্রাভেলস নামের এক দোকানের সহযোগী শহিদুল ইসলাম জানান, কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট করে দিতে পারবেন তিনি।
পরে পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে ফিশারি রোডের এক দোকানে গেলে কম্পিউটার অপারেটর ইয়াসিন জানান, ১০ বছরের একটি পাসপোর্ট করতে ৮ হাজার ও ৫ বছরের একটি পাসপোর্ট করতে নেয়া হয় ৬ হাজার টাকা। মাত্র ৩০ মিনিটেই ফিঙ্গারসহ সবকিছু করে দেয়ার নিশ্চয়তাও দেন তিনি।
এরপর গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে হাজির হলে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন তারা। শহিদুল বলেন, ‘আমি শুধু আপনাকে অনলাইনে আবেদনের কথা বলেছি। আর কিছুই বলিনি। আর ইয়াসিন বলেন, আমার পাসপোর্ট অফিসে কোনো লোক নেই। আমরা আবেদন করা ছাড়া আর কোনো কাজ করি না।’
শুধু শহিদুল ও ইয়াসিনের দোকানটিই নয়। পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অর্ধশত কম্পিউটারের দোকান। দোকানদাররা জানান, টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের সেবা দিয়ে থাকেন তারা।
বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রহিম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা অনেকটাই দিশেহারা হয়ে যাই পাসপোর্ট অফিসে আসলে। এখানে অনিয়মটাই নিয়ম।
মাওলাদ নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, টাকা দিলে সব হয় এখানে। চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটও লাগে না।
তবে সদ্য যোগদান করা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের প্রধান আবু নোমান মো. জাকির হোসেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানান, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি জিরো টলারেন্স বলে দাবি করেন।
৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টে সরকারি ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, তবে দালালচক্র নেয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আর ১০ বছর মেয়াদিতে ৫ হাজার ৭৫০ হলেও হাতিয়ে নেয়া হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। বরিশাল বিভাগে মোট ৬টি জেলা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার মানুষ এই পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসেন।