নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। মাছ-গোশত-মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আদা-রসুনের দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। নিত্যপণ্যের এমন দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। দ্রব্যমূল্যের সাথে আয় বৃদ্ধি না হওয়ায় বাজার করতে এসে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা। আর দেশী মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। একই সাথে বাড়ছে ডিমের দামও। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও যেটি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মতো বাড়তি দেখা গেছে গরুর গোশতের দাম। বেশির ভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে।
এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা কষ্টে পড়ে গেছেন। বেশকিছু ক্রেতাকে দাম শুনে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সুমন আলী। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত চার বছর তার বেতন বাড়েনি; কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল খিলগাঁও বাজারে বাজার করতে এসে সুমন বলেন, এখন যে বেতন পাচ্ছি তাতে আর ঢাকায় থাকা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বৃদ্ধ বাবা-মা গ্রামে থাকেন। আগে তাদের চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা পাঠাতাম। এখন আর সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি নিজের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে সন্তানদের জন্য প্রতি সপ্তাহে মুরগির ব্যবস্থা করলেও এখন আর সেটি পারছেন না তিনি।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এভাবে বাড়ুক আমরা সেটি চাই না। কারণ দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, একইভাবে বাঁধাকপিও প্রতি পিস ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, সিম মানভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ক্ষীরা প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও কাঁচামরিচ মানভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দেশী প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দুই মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে রসুনের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। দুই মাস আগে আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দুই মাসের ব্যবধানে দেশী রসুনের দাম ৭১ শতাংশ বেড়ে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
বাজারে চিনির সঙ্কট এখনো কাটেনি। ১০ শতাংশ দাম বেড়ে খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। দেশী বলে পরিচিত চিকন মসুর ডাল কেজিতে ৮ শতাংশ দাম বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, আমদানি করা রসুনে গত এক বছরে ৬২ শতাংশ দাম বেড়েছে। টিসিবির বাজারদরে অবশ্য একসাথে দুই মাসের তথ্য নেই। গত মাসে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৯০ টাকায়। এক বছরে দেশী রসুনের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দেশী রসুন প্রতি কেজি এখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
গত এক বছরে আমদানি করা আদার দাম ১৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এখন তা সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও তা ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গত এক বছরে দেশী আদার দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, গত মাসে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। টিসিবির তথ্যে জানানো হয়, গত এক বছরে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়, গত মাসে যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।