লন্ডনে বাসা ভাড়া খুবই এক্সপেন্সিভ। মূলত পুরা বাসা বা ফ্ল্যাট নেওয়া স্টুডেন্টদের পক্ষে সম্ভব না। এক রুমের ভাড়াই আসে দেশের টাকার দেড় লাখ টাকা বা তারও উপরে। তাই লন্ডনে এসে আমি একটা বাংলো বাসার একটা রুমেই উঠেছিলাম ১০ দিনের জন্য।
প্রথম রাতটা থাকলাম। পরদিন সকালে উঠে কিচেনে যাবো নাস্তা বানাতে দেখি শুকনা করে চোখ বড় এক বয়ষ্ক ভদ্রলোক। আমার দিকে চোখ রাঙায়ে তাকায়ে জিজ্ঞেস করলো, কতদিন থাকবেন এখানে আপনি? বুঝলাম, উনি বাড়িওয়ালা।
লন্ডনে বাড়ির মালিকরা এজেন্সিকে ভাড়াটিয়া খোঁজার দায়িত্ব দেয়। আমার এজেন্সির সাথে যোগাযোগ হয়েছিলো। তাই আমি বাড়িওয়ালাকে চিনতাম না। আর বাড়িওয়ালা এজেন্সিকে বাসা দিয়ে দিলে সেই বাসায় থাকাটাও বাড়িওয়ালার জন্য অবৈধ হয়ে যায়। সুতরাং বাড়িওয়ালা সেখানে অবৈধভাবেই বাস করছিলেন।
তবুও আমি তাকে বললাম, নতুন বাসা পেলেই চলে যাবো। তো আমাকে খুব কড়াভাবে বললেন এখানে (কিচেনে) কিছু রাখবেন না। ফ্রিজ ইউজ করবেন না। আমিও ঝামেলা করলাম না, ঠিক আছে বলে সম্মতি দিলাম।
পরে দুপুরে খাবার রান্নার সময় কিচেনে যেতেই লোকটার মারাত্মক চিৎকার। কিচেন নাকি ইউজ করা যাবে না, রান্না করা যাবে না। তো আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে খাবো কী!? উনি বললেন এটা ওনার ভাবার বিষয় না। ১০ দিন থাকার কথা উনি জানেন কিন্তু রান্নাবান্না বা গোসল করার কথা উনি জানেন না। অর্থাৎ থাকা যাবে শুধু রুমে কিন্তু শাওয়ার করা বা রান্না করা যাবে না। অথচ ভাড়া ঠিকই চার্জ করছিলেন।
যদিও ওনার সাথে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করে আমি রান্নাটা ঠিকই করে নিয়েছিলাম। চিৎকার করার সময় অনেক অকথ্য ভাষায় উনি আমাকে অপমান করেছিলেন আর সমানে কাঁপছিলেন। এমনকি ভয় দেখিয়েছিলেন আমাকে পোলিসে ধরিয়ে দিবেন। যদিও উনি সেটা করতে পারতেন না।
লন্ডনে মানবাধিকার লংঘন জনিত মামলা ও শাস্তি দুটোই আমিই বরং ওনার বিরুদ্ধে করতে পারতাম।
এরপর যতদিন সেই বাসায় থেকেছি বাথরুমে গেলে বাইরে থেকে লাইট নিভিয়ে দেওয়া, রান্নাঘরে ঢুকতে না দেওয়া এহেন মানসিক অত্যাচার নাই সে করে নাই।
আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম। এক বয়ষ্ক লোকের খারাপ ব্যবহার কতই বা আর নেওয়া যায় আর তার সাথে কতই বা আর খারাপ ব্যবহার করা যায়। তার উপর তিনি বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য এবং সম্মানিত লোক। পরে অবশ্য দ্রুত সরে যাই সেই বাসা থেকে।
সেই স্বনামধন্য এবং সম্মানিত বয়ষ্ক লোকটাকে সেদিন দেখলাম ভারত পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বিজিবি তার গলা ধরে জেরা করছে। কলাপাতার উপর শুয়ে আছে, সারা গা ভেজা। ৬০/৭০ লাখ টাকা খুইয়েছেন, মার খেয়েছেন।
সত্যি বলতে আমার খুব খারাপই লেগেছে লোকটার এই দুরবস্থা দেখে। আমার বাবার বয়সী একজন লোক সারাটাজীবন অহংকার, খারাপ আচরণ, মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া তার চরিত্রে রপ্ত করেছে।
লন্ডনে তার বেশ কয়েকটা বাড়ি আছে। থাকেনও প্রায় লন্ডনে। তার অহংকারের পতনই তাকে হয়তো বাংলাদেশে ডেকে নিয়ে গেছে!
অজন্তা বড়ুয়া