সিলেটের জালালপুরে একটি রাজনৈতিক দলের বিতরণ করা ত্রাণ নিতে এসেছেন সুফিয়া বেগম। বাড়ি থেকে বের হয়ে কাদা মাড়িয়ে অনেকটা পথ নৌকায় এসে তিনি পৌঁছাতে পেরেছেন ত্রাণ বিতরণের স্থানে। লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর পর হুড়োহুড়ি। তবে শেষ পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছেন তিনি।
সুফিয়া ত্রাণ পেলেও তার প্রতিবেশী মিনারা বেগম পাননি। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। একজনের বাড়ি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় তিনি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরেছেন। বাড়ি ফিরেও খাবারের সংকট তার।
অন্যদিকে, মিনারা বেগমসহ আরও চারটি পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকানে আছেন। পানি নামলে বাড়িতে যাবেন, এই অপেক্ষা করছেন। ত্রাণ না পেয়ে তিনি হতাশ। বললেন, ‘এমনই হয়। কেউ পেতেই থাকে, কেউ একেবারেই পায় না।’
সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্ত টানা প্রায় ২০ দিনের বন্যা তছনছ করে দিয়ে গেছে শহর থেকে গ্রাম। ঘরবাড়ি ভেঙেছে ৪০ হাজারের বেশি। অর্ধেকেরও বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত বা যান চলাচল অনুপযোগী। কৃষি, মৎস ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা তাদের জন্য অসম্ভব প্রায়।
সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ গত ১৯ দিন। প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপর পানি থাকায় সড়কটির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে পথচারীরা। যারা সেই পথ দিয়ে আসা-যাওয়া করে, তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। নিজ নিজ বাসাবাড়িতে যেতে বাধ্য হয়ে ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এমন ভোগান্তিতে আছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি এলাকার সহস্রারাধিক পরিবার। এর সঙ্গে প্রায় ১৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুরবস্থায় আছেন ব্যবসায়ীরাও।
দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়ক, লাউয়াই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল সড়কের আগপর্যন্ত জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বঙ্গবীর সড়কে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এ সড়কের দুই পাশের প্রায় ১৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ ছাড়া ধরাধরপুর, মোমিনখলা, রায়েরগাঁও, লাউয়াইন, কামুসনা, আলমপুর ও তেতলী এলাকার ঘরবাড়ি এবং সড়কে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। চণ্ডীপুল এলাকার দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণেও পানি দেখা গেছে। বঙ্গবীর সড়কের জ্বালানি তেলের পাম্প এবং চণ্ডীপুল মোড়ে জ্বালানি তেলের আরেকটি পাম্প পানিতে তলিয়ে থাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ আছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। দক্ষিণ সুরমার ওই এলাকাগুলোতেও পরিচ্ছন্ন করা হবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদ-নদীর পানি সুনামগঞ্জ দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় পানি নামতে সময় লাগছে।
এবার বিদ্যুৎ ভোগাবে
দিন-রাত মিলিয়ে প্রায় তিন-চারবার লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে। এটা কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নয়, সারা সিলেট বিভাগেরই একই অবস্থা। গত দুদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিলেটর বাসিন্দারা। এই লোডশেডিং কতদিন চলবে তা-ও জানা নেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের কর্মকর্তাদের।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে অনিদির্ষ্টকলের জন্য লোডশেডিংয়ে পরেছে সিলেট। গত দুই দিন ধরে সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। তেল ও গ্যাস সংকট নিরসন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করার নির্দেশনা দিয়েছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার। লোডশেডিং সিলেটের কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, তেল ক্রয় করতে একটু সময় লাগবে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তেল ক্রয় করার। এই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে বিবিয়ানাতে প্ল্যান্ট চালু হয়ে গেলে এই সংকট কিছুটা কাটবে।