সরকারি প্রকল্পে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কটের চিত্র ফুটে উঠেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এটি সবচেয়ে কম। এমনকি আগের অর্থবছরের অক্টোবরের ৪.৮০ শতাংশের তুলনায় এ বছর অক্টোবরের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪.০৯ শতাংশ। গতকাল বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত পাঁচ অর্থবছরের হিসাবে এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছর বাস্তবায়ন হার ছিল ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পাঁচ মাসে জিওবি অর্থায়নে ব্যয় হয়েছে ১২ দশমিক ২১ শতাংশ, প্রকল্প সাহায্য ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং নিজস্ব অর্থায়নে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিওবি অর্থায়ন ব্যয়ও গত পাঁচ বছরের মধ্যে কম। এ বছরে এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প ১ হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক ৯টি। এ প্রককল্পগুলোর মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ২৯৬টি।
মন্ত্রণালয়গুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চার মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫২টি প্রকল্পে ১ শতাংশও খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও খরচের খাতাই খুলতে পারেনি। এ মন্ত্রণালয়ের ৭ প্রকল্পে ১০১ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অবশ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের বরাদ্দের প্রায় সবটুকুই চার মাসে খরচ করেছে। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য চলতি বছরের এডিপি বরাদ্দ ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। খরচ করেছে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের খরচ চার মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চার মাসে এ বিভাগের বাস্তবায়নের হার ৫৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বাস্তবায়ন হার এখনো একক অঙ্কের ঘরে আছে, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৮.০৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৬.০৮ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৮.৬৭ শতাংশ, প্রথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫.৭৩ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮.৭৫ শতাংশ, নৌ পরিবহন ৪.৫৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৯.২১ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৪.৭৪ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৫.১০ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ২.৯২ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪.৯৩ শতাংশ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬.৪৫ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৩.৩৪ শতাংশ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৯.৭৪ শতাংশ, প্রবাসী কণ্যাস ৫.৬৪ শতাংশ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৮.৬৩ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩.৪৯ শতাংশ। আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্প সাহায্যের অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ১৩.০৭ শতাংশ। এরা খরচ করেছে ২৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।