বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী। তবে সঠিক সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে নতুন বই এখনও না পৌঁছায় কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অনেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো বই হাতে পায়নি।
যদিও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে। সেইসঙ্গে যথাসময়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বই উৎসব উদযাপন করবে শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৬৫ জন, পিরোজপুর জেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩০ জন, ঝালকাঠি জেলায় ৭৪ হাজার ১০১ জন, বরগুনা জেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৫ জন, পটুয়াখালী জেলায় ২ লাখ ২৫ হাজার ১০৭ জন ও ভোলা জেলায় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৮ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
এসব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরিশাল বিভাগে মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে ৪৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩১টি। এছাড়া ৮ হাজার ৮২৩টি ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের চাহিদা রয়েছে। সব মিলিয়ে বরিশাল ও ভোলা জেলায় সব থেকে বেশি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। সব থেকে কম রয়েছে ঝালকাঠি জেলায়। তবে উপজেলা পর্যায়ে এখন বিভিন্ন শ্রেণি কিংবা বিষয়ের বই চাহিদা অনুযায়ী এসে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এমনকি এখনও বই না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল সদরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষার উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, কোনো উদ্বেগের কারণ নেই, এরইমধ্যে গোটা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের মতো বই এসে পৌঁছেছে। বাকি বইগুলো পথে ও গাড়িতে রয়েছে। আশা করি আগামী ১ জানুয়ারির আগেই প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের চাহিদা অনুযায়ী বই পেয়ে যাবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে বিদ্যালয়গুলো বই উৎসব পালন করবে।
তবে কোনো কোনো বিষয়ের বই পেতে দেরি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই উৎসবের দিনে সব বিষয়ের বই পাবে না, তারাও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই সেসব বই হাতে পেয়ে যাবে। আমি প্রতিনিয়ত ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বই না পাওয়ার কোনো শঙ্কার কারণ দেখছি না।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের ২ হাজার ৭৫১টি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা হবে। এ হিসেবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
যার মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ জন, পিরোজপুর জেলায় ৭৪ হাজার ৭৮৪ জন, ঝালকাঠি জেলায় ৫১ হাজার ১০ জন, বরগুনা জেলায় ৬৮ হাজার ৯৯১ জন, পটুয়াখালী জেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৪৫ ও ভোলা জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৭০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এসব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মোট বইয়ের সম্ভাব্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩টি। এছাড়া দাখিল, এবতেদায়ী, এসএসসি ভোকেশনাল, দাখিল ভোকেশনাল ও কারিগরি ট্রেডে আরও ৬৮ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে।
বই পাওয়া প্রসঙ্গে বরিশাল অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের আওতাধীন বেশির ভাগ বই সংশ্লিষ্টদের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে। যেসব বই বাকি রয়েছে তাও পথে গাড়িতে রয়েছে। কুয়াশাসহ বৈরি আবহাওয়ার কারণে বই পরিবহনে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমরা যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে তাদের নতুন বছরের উপহার পাঠ্যবই তুলে দিতে পারবো।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বই উৎসবের আয়োজনও চলছে, কোনো ব্যাঘাত ঘটার কারণ দেখছি না।
তবে এ পর্যন্ত যে বই হাতে পেয়েছেন তা দিয়ে শতভাগ বিদ্যালয় কভার কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জেলার কর্মকর্তারা।