সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্মৃতি সম্বলিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান ফটকটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। ওই স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গত বছরের ২৮ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বেলতলীসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে তিনটি আন্ডারপাস ও একটি ইউলুপ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি বেলতলীতে আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করা সওজ বলছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান ফটকটি সওজের অধিগ্রহণ করা ভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও তাদের দাবির সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, সওজের আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০২১ সালের ২৮ জুলাই। অন্যদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। তাই কোনোভাবেই সওজের অধিগ্রহণ করা এলাকায় কুবির ফটক নির্মাণ করা হয়নি।
শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের দাবি, আন্ডারপাস নির্মাণের পর পাশেই যেন আরেকটি ফটক নির্মাণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে সভা করেছে সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের প্রতিনিধিরা। সভা শেষে সওজকে আরেকটি ফটক নির্মাণের দাবি জানিয়েছে কুবি কর্তৃপক্ষও। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সওজকে আরেকটি ফটক নির্মাণের জন্য চিঠি দিয়েছে। তারা এখনো আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু জানায়নি।’
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
এদিকে ফটকটি ভেঙ্গে ফেলায় নিন্দা জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল। ওই ফটকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কুমিল্লার ১৫ জন সংসদ সদস্যের নাম ছিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের সুবিধার্থে সওজ আন্ডারপাস নির্মাণ করতেই পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল বেগম খালেদা জিয়ার নাম সম্বলিত ফটকটি ভাঙ্গার অনুমতি দেয়ার আগে নতুন ফটক কোথায় নির্মাণ হবে তা বুঝে নেয়ার। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক নির্মাণের কথা বলে নেত্রীর নাম সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও উপড়ে ফেলা হয়েছে। তখন প্রশাসন সেটি পুনঃস্থাপনের কথা বললেও এখনো করেনি। এবার ভেঙে ফেলা হলো ফটক।’
বর্তমান ফটকটি ভাঙ্গার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, এটা সরকারের প্রকল্প। তারা চাইলে আমাদের না জানিয়েও ভেঙে ফেলতে পারত। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার হওয়ায় আমাদের জানিয়েছে তারা। আমরাও তাদের মিটিংয়ে প্রকল্পের অর্থ থেকে আরেকটি ফটক নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। এখন তারা করে দিলেও পারেন না দিলেও পারেন।’
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘এটা সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু আজ আমাদের নাম নেই, নেত্রীর নাম নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কুমিল্লাবাসীর স্বার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় আজ প্রতিষ্ঠিত। এতেই আমরা স্বার্থক।’