সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপহারের নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ১১ আফ্রিকান নাগরিকের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে ফেসবুকে আইডি খুলে প্রতারণা করতেন তারা।
মঙ্গলবার (১০ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওই ১১ আফ্রিকান নাগরিক হলেন- হেনরি ওসিতা ওকেচুকু, চিসম ইমানুয়েল ওবাইজুলু, ওকাকে পিটার, ওবিনা সান্ডে, ওনেকা এমবা, চিছম এন্থনি ইকুয়েনজে, ওকেয়া আজুবিকে, অনুয়ারাহ ওজুয়েমেনা ডানিয়েল, অনুরুকা জিনিকা ফ্রান্সিস, লুকে ও ডোমাডু চিনেডো।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পরিদর্শক মো. শফিকুল আলম গুলশান থানার মামলায় তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির তারিখ ১০ মে ধার্য করেন।
তারও আগে ২১ এপ্রিল আসামিদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে পল্লবী থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২০ এপ্রিল রাতে রাজধানীর পল্লবী ও ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ১১ বিদেশি নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে একটি ডলার ট্রিক মেশিন, প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত ১৭টি মোবাইলফোন, দুটি ল্যাপটপ, কেমিক্যালের বোতল, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টের কপি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পরদিন (২১ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে বিদেশি পুরুষের আইডি খুলে নারীদের সঙ্গে ও বিদেশি মেয়েদের নামে আইডি খুলে পুরুষদের সঙ্গে চ্যাটিং করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অনেকক্ষেত্রে তার অঢেল সম্পত্তির কিছু অংশ বাংলাদেশি বন্ধুকে দেবেন বা দামি গিফট পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলেন। গিফট হিসেবে আসা হাজার হাজার পাউন্ড বা ডলার ছাড়াতে সুযোগ বুঝে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করেন ভুয়া কাস্টমস অফিসার চাঁদনী।
প্রতারণার আরেকটি কৌশলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা ইউরোপ-আমেরিকার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশে গিফট পাঠিয়েছে বা টার্গেট ব্যক্তিকে ব্যবসায়িক অংশীদার করার কথা বলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
প্রতারকচক্রটির প্রধান নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি ওসিতা ওকেচুকু ও চিসম ইমানুয়েল উল্লেখ করে এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, এ দুজনই মূলত বাংলাদেশি সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা গ্রহণ ও প্রতারকচক্রের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। অন্য বিদেশি সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতারণা করতেন।
চক্রটি মূলত তিনটি উপায়ে প্রতারণা করে থাকে উল্লেখ করে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, তারা ভুয়া ডলার বক্স উল্লেখ করে একটি মেশিন দেখাতেন। এই বক্সে সুইস ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যাংকের সিলযুক্ত ডলার ব্যবহার উপযোগী করার কথা বলে প্রতারণা করা হতো। প্রাথমিকভাবে সুকৌশলে তারা দু-একটি ডলার ব্যবহার উপযোগী করেছে এরকম ভেলকি দেখান।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, চক্রের সদস্যরা অভিনব ‘ডলার ট্রিকের’ বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিক হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে আইডি খুলে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। বন্ধু হিসেবে কারও সঙ্গে সখ্য তৈরি করে উপহার পাঠানোর নামে কিংবা বিনিয়োগের প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। পরে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার আছে ও তার সমপরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে সেসব টাকা ও ডলার একই মেশিনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার জন্য রেখে দিলে টাকাগুলো ব্যবহার উপযোগী ডলারে রূপান্তরিত হবে বলে জানাতেন। এই প্রলোভনে তাদের হাতে টাকা তুলে দিলেই তা নিয়ে সটকে পড়তেন চক্রের সদস্যরা।